নবম পরিচ্ছেদ
সেইদিন সায়ংকালে ডড্লে ডেকের রেলিংএর উপর ভর দিয়া সম্মুখে ঝুঁকিয়া পড়িয়া সমুদ্রের দিকে চাহিতেছিলেন। এমন সময় পূর্ব্বোক্ত পাচকটি তাঁহার পাশে আসিয়া দাঁড়াইল, এবং তাঁহাকে লক্ষ্য করিয়া বলিল, “কি চমৎকার সন্ধ্য।”
ডড্লে বলিলেন, “হাঁ, অতি চমৎকার সন্ধ্যা। পশ্চিম-আকাশে মেঘের সোনালী রঙের সহিত পাটল বর্ণের কি সুন্দর সমাবেশ। কিন্তু কল্য আকাশের অবস্থা কিরূপ থাকিবে কে বলিতে পারে?”
হঠাৎ তাঁহার মনে হইল কথাটা বলিয়া ভাল করেন নাই।—বিশেষত কথাটা তিনি পরিষ্কার ইংরাজীতে বলিয়া ফেলিয়াছিলেন। কি মারাত্মক ভ্রম।—লোকটা তাঁহাকে সন্দেহ করিবে না ত?
তাঁহার কথা শুনিয়া পাচকটা বলিল, “বাঃ, তুমি ত খাসা ইংরাজী বলিতে পার হে। আরবের মুখে এরকম শুদ্ধ ইংরাজী আর কখনও শুনি নাই। তুমি আসল আরব না ছদ্মবেশী, ঠিক ঠাহর করিতে পারিতেছি না, কে তুমি?”
মিঃ ডড্লে বুঝিলেন, তিনি ধরা পড়িয়াছেন। পাচকের নিকট সত্য কথা গোপন করিয়া কোন লাভ নাই, বরং তাহাতে অনিষ্ট হওয়াই সম্ভব। লোকটি অসৎ লোক নহে, ইহা তিনি বুঝিয়াছিলেন, বিশেষতঃ, জাহাজের উপর তাঁহার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করিতে সে ভিন্ন আর কেহই ছিল না। এখন তাহার হস্তে আত্মসমর্পণ করা ভিন্ন তিনি অন্য কোনও উপায় দেখিলেন না, অগত্যা তিনি নিম্নস্বরে বলিলেন, “তুমি আমাকে চিনিয়া ফেলিয়াছ, সুতবং তোমার নিকট আত্মগোপন করিয়া কোন লাভ নাই, আমি তোমার হস্তে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করিলাম। তোমার ইচ্ছা হইলে জাহাজের কাপ্তেনের নিকট আমাকে ধরাইয়া দিয়া আমার সর্ব্বনাশ করিতে পার—আমার জীবন ও মৃত্যু এখন তোমারই হাতে।”