দাক্ষিণাত্যে সতীর কীর্তিস্তম্ভ যথেষ্ট, এবং আফ্রিকায় ও ফিজি দ্বীপে ভাগ্যে কীর্তিস্তম্ভের বালাই নাই, না হইলে ও-দেশগুলায় বোধ করি এতদিনে পা ফেলিবার স্থানটুকুও থাকিত না। এক একটা ডাহোমি সর্দারের মৃত্যু-উপলক্ষে তাহার শতাবধি বিধবাকে সমাধিস্থানের আশেপাশে গাছের ডালে গলায় দড়ি দিয়া ঝুলাইয়া দেওয়া হইত—অর্থাৎ পরলোকে সঙ্গে সঙ্গে পাঠাইবার ব্যবস্থা করা হইত। পরলোকের ব্যাপারটা তেমন স্পষ্ট নয়, বলা যায় কি, যদি লোকাভাবে সেখানে কষ্ট হয়। সাবধানের বিনাশ নাই, তাই সময় থাকিতে একটু হুঁসিয়ার হওয়া। আমাদের এ-দেশেও মূল কারণ বোধ করি ইহাই। যারা অশোক রাজার রাজত্ব দেখিয়াছিল, তাহারা বলে, সে-সময় বিধবাকে দগ্ধ করার প্রথাটা আর্যাবর্তে ছিল না, দাক্ষিণাত্যে ছিল। কিন্তু আর্যাবর্তের আর্যেরা যাই খবর পাইলেন, অসভ্যেরা অসভ্য হৌক, যাহাই হৌক, বড় মন্দ মতলব বাহির করে নাই—ঠিক ত! পরলোকে যদি সত্যই কিছু থাকে ত সেখানে সেবা করে কে? অমনি উঠিয়া-পড়িয়া লাগিয়া গেলেন এবং এত বিধবা দগ্ধ করিলেন যে, স্পেনের ফিলিপের বোধ করি লোভ হইত।
এমনি করিয়া মহাভাগার পূজার উপকরণ সজ্জিত হইয়া উঠিতে লাগিল। কিন্তু একদিন যাহাকে বংশের হিতকামনায় ঘরের মধ্যে আহ্বান করিয়া আনিয়াছি, যাহার জন্য হয়ত যুদ্ধ করিয়াছি, ছলনা, মিথ্যা কথা, এমন কি চুরি পর্যন্ত করিয়াছি, এমন এতবড় উপকারী জীবটাকে এখন হত্যা করি কেন? কারণ আছে। প্রথম পরলোকে সেবা করে কে, দ্বিতীয়, ভাগ্যদোষে যে স্ত্রী বিধবা হইয়া গেল, তাহার দ্বারা আর কি বিশেষ কাজ পাওয়া যাইবে? বরং ভবিষ্যতে অশান্তি-উপদ্রবের সম্ভাবনা, অতএব সময়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এখানে যদি মনে রাখা যায়, নারী ব্যক্তি-বিশেষের নিকটে সম্বন্ধবিশেষেই দামী, অন্যথা নহে; তাহা হইলে অনেক কথা আপনিই পরিষ্কার হইয়া যাইবে। তবে আর একটা সম্বন্ধের কথা উঠিয়া