পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীর মূল্য
১৪

অগৌরবের স্থানে টানিয়া আনিয়াছে, সে-কথা লিখিয়া শেষ করা যায় না।

 থাক্ এ-কথা। আমাদের সহমরণের কথা হইতেছিল, এবং সেই সূত্রে পুরুষের নারী-পূজার উদ্যমের প্রসঙ্গ উঠিয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু এই ব্যাপারে যদি কেহ প্রতিবাদ করিয়া বলেন, এ-দেশে সমস্ত সতীকেই কি জোর করিয়া সহমরণে বাধ্য করা হইত? স্বেচ্ছায় আত্মবিসর্জন কি ছিল না? রাজপুতের জহর-ব্রতের কথা কি জগৎ শুনে নাই? এই ত সেদিনও বাঙালীর ঘরে স্বামীর মৃত্যু-সংবাদ শুনিবামাত্রই স্ত্রী সর্বাঙ্গে কেরোসিন ঢালিয়া পুড়িয়া মরিয়াছে। এমন পতিভক্তি, এমন গৌরবের কথা আর কোন দেশে শোনা যায়? শোনা যদি নাও যাইত, তাহাতেও পুরুষের যশ কিছুমাত্র বৃদ্ধি করিত না, কিংবা নারীর প্রতি পুরুষের শ্রদ্ধা-ভক্তিও সপ্রমাণ করিত না। তদ্ভিন্ন, বলপূর্বক হৌক, কৌশল করিয়াই হৌক, কিংবা মাতাল করিয়াই হৌক, একটিমাত্র নারীকেও দগ্ধ করা কি একটা দেশের পক্ষে যথেষ্ট নয়?

 সেদিন ঐ কেরোসিনে আত্মহত্যা করায় দেশের অনেকেই বাহবা দিয়া বলিয়াছিল, হাঁ সতী বটে! অর্থাৎ, আরো দুই-চারিটি এমন ঘটিলে তাহারা খুশী হয়। এ ঘটনায় এ-দেশের পুরুষের মনের গতি যে কোন্‌দিকে, শুধু যে ইহাই বুঝিতে পারা গিয়াছিল, তাহা নয়, এমন দেশে একসঙ্গে বাস করিয়া নারীর মনের গতিও যে স্বভাবতঃ কোন্ দিকে ঝুঁকিয়া পড়িবে, তাহাও বুঝিতে পারা গিয়াছিল। যে যাহার আশ্রিত, সে তাহাকে সুখী করিতেই চায়। আমি যদি বাটীর মধ্যে সকলকেই একবাক্যে ঐ প্রশংসা করিতে শুনি, আমারো ঐ অবস্থায় সুখ্যাতি ও বাহবা-লাভের লোভ যে প্রবল হইয়া উঠিবে, তাহা অস্বাভাবিক নহে। ইহার উপর ধর্মের গন্ধ আছে। সে-বেচারার হাতে নাকি গীতা ছিল। গীতায় কি ওই কথা বলে? কিন্তু সে ভাবিল, গীতা হাতে থাকিলে আরো ভাল। এখানে অশোভন উদাহরণ দিবার ইচ্ছা আমার না হইলে এই গৌরবান্বিত কেরোসিনে আত্মহত্যায় এমন