পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীর মূল্য
২০

দায়’ গ্রন্থের উপক্রমণিকা খণ্ডে ইহার বিরুদ্ধে বিস্তর আলোচনা করিয়া দেখাইয়াছেন, প্রাচীনকালে স্ত্রীলোক বেদ পর্যন্ত তৈয়ারি করিয়া গিয়াছেন; কিন্তু এ-সমস্ত তর্ক কোন কাজেই লাগে না, পুরুষ যখন শাস্ত্রের “ত্রয়ী ন শ্রীতিগোচরা” শ্লোকের সন্ধান পাইয়াছে। ইয়োরোপের কোন এক প্রাচীন ধর্মযাজক লিখিয়া গিয়াছেন—Shall the maid Olympias learn philosophy? By no means woman’s philosophy is to obey laws of marriage. মার্টিন লুথার সর্বদাই বলিতেন— No gown worse becomes a woman than the desire to be wise. চীনেদের দেশে একটা প্রচিলত বাক্য আছে, জ্ঞান যেমন পুরুষের শোভা বৃদ্ধি করে, অজ্ঞান তেমনি স্ত্রীলোকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। ইহার পর সে আর পুরুষের হাতহইতে কি মঙ্গল আশা করিতে পারে? কবে উর্বশী বেদ রচনা করিয়া গিয়াছেন, কেন শ্রোতসূত্রে পত্নীকে বেদ প্রদান করিবার কথা ছিল, স্বামী প্রবাসে থাকিলে কি-হেতু দশ পৌর্ণ-মাস ব্রতে স্ত্রীর হোম করিবার অধিকার হইয়াছিল, বৃহদারণ্যকোপনিষদের যাজ্ঞবল্ক্য-মৈত্রেয়ী, যাজ্ঞবল্ক্য-গার্গী সংবাদ কেন রচিত হইয়াছিল, এ-সব আলোচনা অরণ্যে রোদন। ছয় সহস্র বৎসর পূর্বে মিশর প্রভৃতি প্রাচীন সভ্যতার দিনে নারীর অধিকার-সম্বন্ধে মাস্‌পেরো “husband a privileged guest”, “she inherited equally with her brothers”, “mistress of the house”, “judicially equal of man”, “having the same rights and being treated in the same fashion”, ইত্যাদি অনেক কথা বলিয়াছেন। এই সভ্যতার আলো রোম পাইয়াছিল বলিয়া তাহার নারী-জাতিও এ-সময় যথেষ্ট উন্নত হইয়াছিল। এই pagan law পরবর্তী সুসভ্য আইন-কানুনের মধ্যে কোথায় ডুবিয়াছে, মেম সাহেব তাহার Ancient Law গ্রন্থে যথেষ্ট আলোচনা করিয়াছেন।

 সার হেনরির এই অধ্যায়টা আমি সকল শিক্ষিত রমণীকেই পড়িয়া দেখিতে অনুরোধ করি।