পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭
নারীর মূল্য

ভাষায় যে-সকল মন্ত্রের কথা বলা হইয়াছে, তত্তদ্ভাষাবিদেরা জানেন যে, বস্তুগত্যা উহাদের অস্তিত্ব নাই।

 এইখানে অতি অনিচ্ছায় তাহার মনে একটু খটকা বাজিয়াছে। তা সে কিছুই নয়। পুরাণাদিতে যখন যোগবলে হাত গণিয়া ভবিষ্যৎ বলা হইয়াছে, মেরুতন্ত্রের গ্রন্থকারও তেমন হাত গণিয়া লণ্ডন নগরের এবং কলিকালে মন্ত্রসিদ্ধ ইংরাজের পরাক্রমের কথা বলিবেন, ইহা বিচিত্র কি? এইজন্য তিনি পূর্ব হইতেই সন্দেহকারীকে সতর্ক করিয়া পুরাণাদির ভবিষ্যদুক্তির কথা পড়িয়াছেন। ধন্য বিশ্বাস! ধন্য যুক্তি! আমি জানি, আমার কথাগুলা অনেকেরই ভাল লাগিতেছে না এবং বিরুদ্ধ তর্ক করিবার ইচ্ছা থাকিলে অনেকরকমেই করা যাইবে। কিন্তু ইহা তর্কের কথা নহে, বিবাদ-বিসংবাদের বস্তু নহে— ভাবিবার বিষয়, কাজ করিবার সামগ্রী। স্বদেশ-বিদেশের শাস্ত্রে, ইতিহাসে যাবতীয় জাতির আচার-ব্যবহার সম্বন্ধে আমার চেয়ে যাঁহার পড়াশুনা অধিক, তর্ক করিবার ইচ্ছা করিলে আমাকে পরাস্ত করিতে পারিবে জানি, কিন্তু যে সত্য আমি হৃদয়ের ব্যথার ভিতর দিয়া বাহির করিলাম, সে সত্যকে কোন মহামহোপাধ্যায় যে উড়াইয়া দিতে সক্ষম হইবেন না, তাহা নির্ভয়ে বলিতে পারি। বাস্তবিক, আমার হার-জিৎ যাহাই কেননা হৌক, এ-কথাটা কিন্তু নিশ্চয় করিয়াই দেখিবার সময় আসিয়াছে, যথার্থ সামাজিক প্রশ্নের মীমাংসার ভার সমাজের কাহাদের হাতে থাকা উচিত। যাঁহারা জোর করিয়া এতদিন করিয়া আসিয়াছেন, তাঁহারাও করুন। দুর্গা-পূজার মহাষ্টমী দুই দণ্ড আগে বসিবে, কি পরে বসিবে, বিড়াল মারার প্রায়চিত্তে এক কাহন কিংবা পাঁচ কাহন কড়ি প্রশস্ত, মহান্ত মহারাজেরা বেশ্যা রাখিলে স্বর্গে যায়, কিংবা বিবাহ করিলে পতিত হয়,এ-সব মীমাংসা তাহারাই করিতে থাকুন, কিছুমাত্র আপত্তি করি না। কিন্তু সমাজের ভাল-মন্দ কিসে হয়, না হয়, কোন্ নিয়ম রাখিলে বা পরিবর্তন করিলে আধুনিক সমাজের কল্যাণ বা অকল্যাণ হইবে, স্বদেশের কাজে বিলাত গেলে জাতি যাইবে কি