পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯
নারীর মূল্য

থাকে থাক্, আর একটা শাস্ত্রে উল্টা শ্লোকও ত আছে! গান্ধর্ব বিবাহ, ক্ষেত্রজ সন্তানাদি নিজেদের সংসারে যখন কোনমতেই পছন্দ করি না, তখন আর কেহ করিলেও যত পারিব তত গালি দিব।

 ‘পছন্দ করি না’ এইটাই আসল কথা। বাস্তবিক কোন শাস্ত্রই পুরুষে অধিকদিন মানিয়া চলে না, যদি না তাহা তাহাদের আন্তরিক অভিপ্রায়ের সহিত মিশ খায়। মিশ খাইলে, তখনই সেটা টিকসই হয়। অন্যথা, স্বয়ং ভগবান রাস্তায় দাঁড়াইয়া নিজের মুখে চেঁচাইয়া বলিয়া গেলেও হয় না। হইতে পারে, অবস্থা-বিশেষে এই শাস্ত্র কাহারও বা দুঃখ উপস্থিত করে, কিন্তু সাধারণ ইচ্ছার চাপে এ দুঃখ স্থায়ী হইতে ত পায়ই নাই, পরন্তু দুঃখ উৎকৃষ্টতর ধর্মের আকার ধরিয়া পরলোকে শত-গুণ সুখের আশ্বাস দিয়া পরিতৃপ্ত করিয়া যায়। পুরুষের ক্ষণিক দুঃখ ক্ষণিকেই শেষ হয়; কিন্তু চির-দুঃখ যাহাকে সহিতে হয়, সে নারী।

 আমাদের দেশে পূজার্হা নারীর পূজার ব্যবস্থা দেখিয়াছি। তথাপি ইহাকে আদর্শ বলিয়া যে পুরুষ শ্লাঘা বোধ করেন, তাঁহাকে আমার কিছুই বলিবার নাই। বিদেশের ব্যবস্থাও দেখিয়াছি—সেখানেও ঐ ব্যাপার। চার-পাঁচ হাজার বৎসর পূর্বেকার লুপ্ত আইন-কানুনের একটা ধারায় সামাজিক ব্যবস্থা লেখা আছে—“If a wife hates her husband and says, ‘thou art not my husband’ into the river they shall throw her.” আর একটা ধারায় লেখা আছে, “If a husband says to his wife, ‘thou art not my wife’ half a mina of silver he shall weigh out to her and let her go.” অর্থাৎ স্ত্রী যদি স্বামীকে পছন্দ না করে, তাহা হইলে তাহাকে নদীতে নিক্ষেপ কর, আর পুরুষ যদি পছন্দ না করে, তাহা হইলে আধ মিনা ওজনের রূপা দিয়া বিদায় করিয়া দাও। কি সূক্ষ্ম বিচার! আধ মিনা রূপা কতখানি, অবশ্য সে-কথা বলিতে পারি না, কিন্তু যতই হৌক, জলে ডুবাইয়া মারার সঙ্গে নিক্তিতে