পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীর মূল্য
৩২

করিলে সদ্য-বিধবাকে আটকাইয়া রাখিতে পারা যায়, এবং এতদর্থে পিতা-মাতারই বা কর্তব্য কি। বস্তুতঃ, সুরু হইতে শেষ পর্যন্ত পুরুষের এই ভয়টাই চোখে পড়ে যে, নারীকে আটকাইয়া রাখিতে না পারিলেই সে বাহির হইবার জন্য পা তুলিয়া থাকে। কেহ বলিলেন, ‘বিশ্বাসং নৈব কর্তব্যম্’, কেহ আর এক ধাপ চড়িয়া বলিলেন, ‘অঙ্কে স্থিতাপি’, কেহ বা ইহাতেও সন্তুষ্ট হইতে না পারিয়া প্রচার করিলেন, ‘দেবা ন জানন্তি’। বলা বাহুল্য, ইহাতে পূজার্হা নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায় নাই এবং পুরুষের কোন সংস্কারের উপর যে এতগুলা বিধি-নিষেধ ডাল-পালা ছড়াইয়া বড় হইয়া উঠিতে পারিয়াছে, সে-সম্বন্ধেও বোধ করি দুই মত নাই।

 বিধবা-বিবাহ ভাল কিংবা মন্দ, সে তর্ক তুলিব না। কিন্তু এ বিবাহ যদি শুধু এই বলিয়াই উচিত হয় যে, অন্যথা তাহাকে সুপথে রাখা শক্ত হইবে, তাহা হইলে আমি বলি, বিধবা-বিবাহ না হওয়াই উচিত।

 কিন্তু কথাটা কি সত্য? পুরুষ নির্বিচারে মানিয়া লইয়াছে, কিন্তু যাচাই করিয়া দেখিয়াছে কি, বিধবা বাহিরে আসিবার জন্য নিশিদিন উদ্যত হইয়াই থাকে কি না? কথাটা প্রচার করিবার সময়, বিশ্বাস বদ্ধমূল করিয়া লইবার সময়, একবারও সে মনে করিয়াছে কি, কি গভীর কলঙ্কের ছাপ সে নারীত্বের উপর বিনা-দোষে ঢালিয়া দিতেছে? বিলাতের একজন বড় দার্শনিক বলিয়াছিলেন, দাস ব্যবসায় যেমন “sum of all villainy’, বেশ্যাবৃত্তি তেমনি ‘sum of all degradations.’ আমি বিদেশের কথা বলিলাম, কারণ দেশের কথা তুলিতে সাহস হয় না। দেবতাদের মত এ-দেশের স্বর্গেও এঁরা থাকেন, এবং রাগ করিয়া শাপ-সম্পাত করিলে মুনি-ঋষিদের চেয়ে বড় কম ফলে না। যাহাই হৌক, বিদেশীর কথায়, এই এতবড় হীনতার মধ্যে ডুব দিয়া পড়িবার জন্যই কি নারী অহরহ উন্মুখ হইয়া থাকে এবং এতবড় পাশবিকতাই কি নারীর স্বাভাবিক চরিত্র? পুরুষ তাহার গায়ের জোর লইয়া বলিবে, ‘হাঁ’। নারী তাহার সঙ্কীর্ণ অভিমান লইয়া বলিবে, ‘না’। বাস্তবিক