যাচাই না করিয়া শুদ্ধ একটা কাল্পনিক উত্তর দিবার চেষ্টা করিলে তর্কই চলিতে থাকিবে। কিন্তু যাচাই করিয়া দেখিলে কি জবাব পাওয়া যায়, তাহাই দেখাইতেছি। বারো-তেরো বৎসর পূর্বে জনৈক ভদ্রলোক এই বাঙলাদেশে কুলত্যাগিনী বঙ্গরমণীর ইতিহাস সংগ্রহ করিতেছিলেন। তাহাতে বিভিন্ন জেলার বহুসহস্র হতভাগিনীর নাম, ধাম, বয়স, জাতি, পরিচয় ও কুলত্যাগের সংক্ষিপ্ত কৈফিয়ৎ লিপিবদ্ধ ছিল। বইখানি গৃহদাহে ভস্মীভূত হইয়াছে—বোধ করি, ভালই হইয়াছে—সুতরাং কেহ সঠিক প্রমাণ চাহিলে দিতে পারিব না সত্য, কিন্তু ইহার আগাগোড়া কাহিনীই আমার মনে আছে। আমি হিসাব করিয়া দেখিয়া বিস্মিত হইয়া গিয়াছিলাম যে, এই হতভাগিনীদের শতকরা সত্তর জন সধবা। বাকী ত্রিশটি মাত্র বিধবা। ইহাদের প্রায় সকলেরই হেতু লেখা ছিল, অত্যধিক দারিদ্র্য ও স্বামী প্রভৃতির অসহনীয় অত্যাচার-উৎপীড়ন। সধবাদিগের প্রায় সবগুলিই নীচজাতীয়া, আর বিধবাগুলির প্রায় সবগুলিই উচ্চ-জাতীয়া। নীচজাতীয়া সধবারা এই বলিয়া জবাবদিহি করিয়াছিল যে, খাইতে-পরিতে তাহারা পাইত না—দিনে উপবাস করিত, রাত্রে স্বামীর মারধোর খাইত। সৎকুলের বিধবারাও কৈফিয়ৎ দিয়াছিল, কেহ-বা ভাই ও ভ্রাতৃজায়ার, কেহ-বা শ্বশুর-ভাশুরের অত্যাচার আর সহ্য করিতে না পারিয়া এই কাজ করিয়াছে। ইহাদের সকল কথাই যে সত্য তাহা নয়, তথাপি সমস্ত ব্যাপারটা একটু মনোযোগের সহিত দেখিলেই চোখে পড়ে—এমনিই বটে!
ভদ্র-কুলের বিধবারা স্বামীর অবর্তমানে যেমন নিরুপায়, নীচ-জাতীয়া সধবারা স্বামী বর্তমানে ঠিক তেমনি নিরুপায়; কিন্তু তাহাদের বিধবার অবস্থা ভাল। কারণ, নীচ-ঘরের স্ত্রীলোকেরা বিধবা হইলে আর বড় কাহাকেও মিথ্যা ভয় করিয়া চলে না— অনেকটা স্বাধীন। তাহারা হাট-বাজারে যায়, পরিশ্রম করে, ধান ভানে, প্রয়োজন হইলে দাসীবৃত্তি করে। সুতরাং সৎ উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করা তাহাদের পক্ষে সহজ,