পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীর মূল্য
৪৬

গর্ভের সন্তান যে কোন বংশের তাহা স্থির করিবার উপায় ছিল না। এই হেতুই নিজের স্ত্রীর সন্তান বিষয় পাইত না, বিষয় পাইত ভগিনীর সন্তান। তাহাকে লইয়াও যে কাড়াকড়ি হইত না তাহা নহে। কিন্তু হাজার কাড়াকড়ি হইয়া গেলেও, ভগিনীটি যে অন্ততঃ নিজের বংশের এবং তাহার গর্ভের সন্তান যে কতকটা নিজের বংশেরই হইবে সেবিষয়ে তাহারা নিঃসন্দেহ ছিল। এই হেতু ভাগিনেয় বিষয় পাইত, পুত্র পাইত না। বিষয় যে-ই পাউক, উত্তরাধিকার স্থির করিত পুরুষেরা, নারীর তাহাতে কিছুমাত্র হাত ছিল না। মানুষের বুদ্ধির তারতম্য-হিসাবে ছাগলের গলা ডান দিক ঘেঁসিয়াই কাটা হৌক, কিংবা বাঁ দিক ঘেঁসিয়াই হৌক, ছাগলের ভাল-মন্দ তাহাতে নির্দিষ্ট হয় না। বোধ করি এই কারণেই টাইলার সাহেব সুবর্ণ উপকূলের নিগ্রোদের সম্বন্ধে ইঙ্গিত করিয়া গিয়াছেন যে, বাহির হইতে নারীর অবস্থা ‘officially superior’ দেখাইলেও ‘practically very inferior.’ আমার মনে হয়, সব জাতির মধ্যেই এই ইঙ্গিত খাটে। Crawley সাহেব সম্প্রতি তাঁহার Mystic Rose গ্রন্থে নারীর উন্নত অবস্থা সম্বন্ধে পাপুয়ানদের কথা তুলিয়া এই যে একটা তর্ক উত্থাপন করিয়াছেন যে, ইহাদের নারী নির্যাতন করা সম্বন্ধে যথেষ্ট দুর্নাম থাকিলেও, এই যে একটা প্রথা আছে, নারীরাই স্বামী মনোনীত করে এবং বিবাহের প্রস্তাব তাহারাই করিতে পারে, পুরুষে পারে না,—এই প্রথাটাই তাহাদিগের অবস্থা যথেষ্ট উন্নত করিয়া রাখিয়াছে। কথাটা বাহির হইতে মন্দ না শুনাইলেও বিপক্ষে বলিবারও বিস্তর আছে। প্রথম এই যে, মনোনীত করে বলিয়াই যে পুরুষের কাছে নিপীড়িত হয় না, তাহার কোন সঙ্গত হেতু নাই। যাহাদের মধ্যে দাম্পত্য প্রণয়ের কিছুমাত্র ধারণা নাই, যাহারা কথায় কথায় স্ত্রী-হত্যা করে, তাহাদের মধ্যে নারীর এই একটুখানি ক্ষমতা পরিশেষে তাহাদিগের যে বিশেষ কোন কাজে আসে বলিয়া মনে হয় না। রেভারেণ্ড সুটার সাহেব বলেন, নারীর অনেকটা মান-মর্যাদা আফ্রিকার কঙ্গো