পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯
নারীর মূল্য

পূর্বে বলা চলে না, নারী যথার্থ মূল্য পাইয়াছে কি না। পুরুষ এমন কথাও বলিতে পারে যে, যে-দেশে নারী যে মূল্য লাভ করিয়া আসিতেছে, হয়ত সেই দেশে সেই তাহার প্রাপ্য মূল্য। অতএব, এই কথাটা আলোচনা করা অনাবশ্যক। করিতে হইলে সর্বাগ্রে নর-নারীর সম্বন্ধের বিচারই করিতে হয়। সম্বন্ধ মুখ্যতঃ চারিটা। স্ত্রী, ভগিনী, কন্যা ও জননী—তাহাই আমি পর্যায়ক্রমে আলোচনা করিতেছি। আদিম মানব কি করিয়া স্ত্রী লাভ করিত, তাহার অনেক তথ্য Joan F. ’MLennan তাঁহার প্রসিদ্ধ Primitive Marriage গ্রন্থে নানা দেশ হইতে আহরণ করিয়া লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। মানুষ যখন পশুর মত ছিল, তখন কি করিয়া স্ত্রী লাভ করিত, আমি এই প্রবন্ধের প্রারম্ভেই সে ইঙ্গিত একাধিকবার করিয়াছি। সবল দুর্বলের নিকট হইতে কাড়িয়া লইত এবং সখ মিটিলে ত্যাগ করিত। তাহার সখের কাছে, তাহার স্ত্রী-লাভের প্রয়োজনের কাছে সে কিছুই বিচার করিত না, কোন সম্বন্ধই তাহাকে বাধা দিতে পারিত না। M’Lennan একস্থানে বলিয়াছেন, “men must originallv have been free of any prejudice against marriage between relations.” তাঁহার এ-কথাটা বড় সত্য কথা। Primitive instinct বলিয়া তখন কোন বস্তু ছিল না। মা মেয়ে ভগিনী কিছুই না মানিবার অনেক উদাহরণ শুধু যে অসভ্য আদিম মানবের কাছেই পাওয়া যায় তাহা নহে, অর্ধসভ্য ও সুসভ্যের মধ্যেও পাওয়া যায়। অতিশয় সভ্য সমাজেও যে মাঝে মাঝে বীভৎস গোপন কলঙ্কের কথা শোনা যায়, এ-ও যে সেই আদিম মানবের খেলা তাহা heredity-সম্বন্ধে যে-কেহ কিছু আলোচনা করিয়াছেন, তিনিই অবগত আছেন। পূর্বে বলিয়াছি, অসভ্য ছিপিওয়েনেরা জননীকে বিবাহ করে। অর্ধ-সভ্য আফ্রিকার গেবুন (Gaboon) প্রদেশের রাণী কিছুদিন পূর্বে স্বামীর মৃত্যুর পর রাজ্য হারাইবার আশঙ্কায় নিজের জ্যেষ্ঠ পুত্রকে বিবাহ করিয়া সিংহাসনের দাবী বজায় রাখিয়াছিলেন। পারস্যের সম্রাট্ আর্টজারাক্সস্ নিজের