মণি-মাণিক্য মহামূল্য বস্তু, কেন-না তাহা দুস্প্রাপ্য। এই হিসাবে নারীর মূল্য বেশী নয়, কারণ সংসারে ইনি দুষ্প্রাপ্য নহেন। জল জিনিসটি নিত্য প্রয়োজনীয়, অথচ ইহার দাম নাই। কিন্তু যদি কখনও ঐটির একান্ত অভাব হয়, তখন রাজাধিরাজও বোধ করি একফোটার জন্য মুকুটের শ্রেষ্ঠ রত্নটি খুলিয়া দিতে ইতস্ততঃ করেন না। তেমনি—ঈশ্বর না করুন,—যদি কোনদিন সংসারে নারী বিরল হইয়া উঠেন, সেইদিনই ইহার যথার্থ মূল্য কত, সে তর্কের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হইয়া যাইবে— আজ নহে। আজ ইনি সুলভ।
কিন্তু দাম যাচাই করিবারও একটা পথ পাওয়া গেল। অর্থাৎ পুরুষের কাছে নারী কখন, কি অবস্থায়, কোন সম্পর্কে কতখানি প্রয়োজনীয়,তাহা স্থির করিতে পারিলে—নগদ আদায় হোক, আর না হোক, অন্ততঃ কাগজে-কলমে হিসাব-নিকাশ করিয়া ভবিষ্যতে একটা নালিশ-মকদ্দমারও দুরাশা পোষণ করিতে পারা যায়। একটা উদাহরণ দিয়া বলি। সাধারণতঃ বাটীর মধ্যে বিধবা ভগিনীর অপেক্ষা স্ত্রীর প্রয়োজন অধিক বলিয়া স্ত্রীটি বেশী দামী। আবার বিধবা ভগিনীর দাম কতকটা চড়িয়া যায়, স্ত্রীটি যখন আসন্ন-প্রসবা—যখন রাঁঁধা-বাড়ার লোকাভাব, যখন কচি ছেলেটাকে কাক দেখাইয়া বক দেখাইয়া দুধটা খাওয়ানো চাই। তাহা হইলে পাওয়া যাইতেছে—নারী ভগিনীসম্পর্কে বিধবা অবস্থায়, নারী ভার্য্যা-সম্পর্কীয়ার অপেক্ষা অল্প মূল্যের। ইহ সরল স্পষ্ট কথা। ইহার বিরুদ্ধে তর্ক চলে না। একটা শ্লেট-পেন্সিল লইয়া বসিলে, নারীর বিশেষ অবস্থায় বিশেষ মূল্য বোধ করি আঁক কবিয়া কড়া-ক্রান্তি পর্যন্ত বাহির করা যায়। কিন্তু কথা যদি উঠে, ইহার অবস্থা-বিশেষের মূল্য না হয় এক রকম বোঝা গেল, কিন্তু নারীত্বের সাধারণ মূল্য ধার্য করিবে কি করিয়া, যখন ইহার জন্য সোনার লঙ্কা নিপাত হইয়াছিল, ট্রয়-রাজ্য ধ্বংস হইয়া গিয়াছিল;