তাহারা ক্রমাগত করিয়া আসিয়াছে, এবং তাহাতে কিছুতেই সুবিধা করিয়া উঠিতে পারে নাই। অধিকাংশ স্থলেই পুরুষ শুধু লড়াই করে, এবং শিকার করে—আর কিছু করে না। জীবনধারণের বাকী কাজগুলা সমস্তই একা নারীকে করিতে হয়। তাহারা জল তোলে, কাঠ কাটে, মোট বয়, জমি চাষ করে, সন্তান প্রসব করে, রাঁধা-বাড়া সমস্তই করে। এমন কি, শিকারলব্ধ পশুটাকেও বহিয়া আনিবার জন্য বনে জঙ্গলে পুরুষের পিছনে পিছনে ঘুরিয়া বেড়াইতে হয় এবং ইহার অনিবার্য ফলও যাহা হইবার ঠিক তাহাই হয়। অবশ্য স্বীকার করি, সব দেশেই কিছু নর-নারীর কাজের ধারণা এক হইতে পারে না—হয়ও না। কিন্তু একটু মনোযোগ করিলেই টের পাওয়া যায়, সভ্যতার অনুপাতে কর্তব্য-বিভাগের একটা সাদৃশ্য আছে, এবং এই অনুপাত যত বাড়িতে থাকে, সাদৃশ্যও তত কমিয়া আসিতে থাকে। যেমন, ব্যবহারের নিমিত্ত দূর হইতে জল আনিবার আবশ্যক হইলে, একজন ফরাসী কিংবা ইংরাজ হয়ত তাহা নিজেরাই করিবেন, কিন্তু আমরা লজ্জায় মরিয়া যাইব, এবং তাহার পরিবর্তে গর্ভবতী স্ত্রীর কাঁকালে একটা মস্ত ঘড়া তুলিয়া দিয়া জলাশয়ে পাঠাইয়া দিয়া লজ্জা নিবারণ করিব। পেরুর উন্নত অবস্থার দিনে পুরুষ চরকা কাটিত এবং কাপড় বুনিত, স্ত্রীলোক লাঙ্গল ঠেলিত। এখনো সামোয়ার অধিবাসীরা রাঁধাবাড়া করে, স্ত্রীলোক হাটে-বাজারে যায়। আবিসিনিয়ার পুরুষদের বাজারে যাইতে মাথা-কাটা যায়, কিন্তু প্রফুল্ল-মুখে ঘাট হইতে নরনারী উভয়েরই কাপড় কাচিয়া আনে। এইরূপ কাজ-কর্মের ধারণা সব দেশে এক নয়, এবং ছোট-খাটো বিষয়ে এক না হইলেও বেশী কিছু আসিয়া যায় না সত্য, কিন্তু এই ধারণা স্বাভাবিক নিয়মকে অতিক্রম করিয়া গেলে অমঙ্গল অনিবার্য। অর্থাৎ, পুরুষ সর্ববিষয়ে স্ত্রীলোকদের কাজ করিতে গেলে, যেমন করডোদের মত অকর্মণ্য হীন হইয়া পড়ে, তেমনি ডাহোমি রাজার স্ত্রী-সৈন্যও যথার্থ unsexed হইয়াই তবে
পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৫
নারীর মূল্য