পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীর মূল্য
৬৮

রাখিয়া যাও। Monogamy যাহা নারীর যথার্থ সম্মানের ঠাঁই, এবং যাহা একমাত্র নর-নারীর প্রকৃত স্বাভাবিক বন্ধন, সে ধারণাই প্রায় এ-দেশে নাই। অথচ, সতীত্বের এত অপর্যাপ্ত রীতি-নীতি, এটা বজায় রাখিবার এত অদ্ভুত ফন্দি আর কোন দেশে কোনদিন উদ্ভাবিতও হয় নাই। মনে হইতেছে কোন এক মস্ত বড় লোকের লেখায় পড়িয়াছি, আমাদের দেশে সমস্ত রকম সামাজিক প্রশ্নের যে একটা বড় রকম উত্তব দিয়াছেন, তাহা এখনও জগতের সম্মুখে আছে, এবং তাহার সফলতা অনিবার্য, না, কি এমনি একটা কথা। কি জানি আমাদের উত্তর দিয়াছিল, এবং জগতের কাহারা সেজন্য হাঁ করিয়া বসিয়া আছে; কিন্তু ফল যে তাহার অনিবার্য হইয়া উঠিয়াছে, তাহা টের পাওয়া যাইতেছে। তাঁহার দেখাদেখি আরো অনেক—যাঁহারা সামাজিক ইতিহাসের কোন ধার ধারেন না, তাঁহারাও এই সমস্ত কল্পনার ধুয়া গাহিতে শুরু করিয়াছেন। “বড়-রকম উত্তর দিয়াছিল”, “সমস্ত সামাজিক প্রশ্ন”, “জগতের সম্মুখে আছে” ইত্যাদি বুলির অর্থ বোঝাও যেমন শক্ত, এই-সব সাহিত্যিক verbiage-এর প্রতিবাদ করিতে পারাও ততোধিক কঠিন। অন্যান্য জাতি চোখের উপর দিন দিন বড় হইয়া যাইতেছে, নর-নারী মিলিয়া পতিত সমাজটাকে দুইদিনে ঠেলিয়া উপরে তুলিয়া ধরিতেছে, যে যাহার ন্যায্য অধিকারের মধ্যে চলা-ফেরা করিয়া উন্নত হইয়া উঠিতেছে—তবুও সে-সব কিছুই নয়। আর আমাদের দেশে সেই অবোধ্য বড় উত্তরটাই মস্ত বড় এবং তাহার ভবিষ্যৎ কাল্পনিক সফলতাটাই সর্বোপরি বাঞ্ছনীয়। সেই জাতিভেদের অসংখ্য সঙ্কীর্ণতা, বালিকা-বিবাহ, বিবাহ না দিলেই জাত যাওয়া, বারো বছরের বিধবা মেয়েকে দেবী করার বাহাদুরী, পঞ্চাশ বছরের বুড়ার সহিত এগারো বছরের মেয়ের বিবাহ এবং তাহার বছর-দুই পরেই তাহার গর্ভের সন্তান—এই সমস্তই বড় রকমের উত্তর। অথচ কথাটি বলিবার যো নাই। পণ্ডিতেরা হাঁ হাঁ করিয়া ছুটিয়া আসিয়া বলিবেন “তুমি আমাদের মুনি-ঋষিদের চেয়ে বেশী