পাতা:নিগ্রোজাতির কর্ম্মবীর - বিনয়কুমার সরকার (১৯১৪).pdf/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৮
নিগ্রোজাতির কর্ম্মবীর

দুশ্চিন্তায় আমার ঘুম হইত না। কোন কোন ঘরে যাইয়া দেখিতাম—তিন চারিজন ছাত্র জড়াজড়ি করিয়া আগুন পোহাইতেছে। সকলের পীঠের উপর দিয়া একটা কম্বল ফেলা আছে। কেহই ঘুমাইতে পায় নাই। একদিন রাত্রে খুব বেশী শীত পড়িয়াছিল। পরদিন সকালে ধর্ম্ম মন্দিরে যাইয়া ছাত্রদিগকে জিজ্ঞাসা করিলাম “কাল রাত্রে তোমাদের কার কার হাত পা জমিয়া গিয়াছিল?” অমনি তিন জন ছাত্র হাত তুলিয়া বুঝাইল। এত কষ্ট স্বীকার করিয়াও ছাত্রেরা কখন বিরক্তির ভাব দেখায় নাই। তাহারা দেখিত যে আমরা যথাসাধ্য তাহাদিগকে সুখে রাখিতেই চেষ্টা করিতেছি। বরং তাহারা শিক্ষকদিগেরই কষ্ট যাহাতে না হয় তাহার জন্য উদ্‌গ্রীব হইত। শীত সহ্য করা তাহাদের ছাত্রজীবনের অন্যতম ব্রত স্বরূপ হইয়াছিল।

 আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ মহাশয়েরা সর্ব্বদা বলিয়া থাকেন, “নিগ্রোজাতি শাসন কর্ম্মে স্বায়ত্ত বিধান চাহে কেন? আমরা উহাদের উপর কর্ত্তৃত্ব করি বলিয়া উহাদের মধ্যে সংযম, শান্তি, শৃঙ্খলা থাকে। আমরা ছাড়িয়া দিলে উহাদের সমাজে অশান্তি, অত্যাচার, ব্যভিচার ইত্যাদি বিরাজ করিবে। এক নিগ্রো অন্য নিগ্রোর অধীন থাকিতেই চাহে না। উহারা কখনই নিজে মিলিয়া মিশিয়া কাজ কর্ম্ম করিতে পারিবে না। আমাদের শাসনেই উহারা সুখে আছে।” আমি পূর্ব্বে এ কথা কিছু কিছু বিশ্বাস করিতাম। কিন্তু টাস্কেজী বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতায় একথা আর আমি স্বীকার করিতে প্রস্তুত নহি।