পাতা:নিগ্রোজাতির কর্ম্মবীর - বিনয়কুমার সরকার (১৯১৪).pdf/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার টাকা আসে কোথা হ’তে?
১৯৩

 দ্বিতীয়তঃ, প্রচারের ফল কি হইতেছে তাহার জন্য উদ্বিগ্ন হইও না। ধর্ম্মভাবে প্রচারকার্য্যে লাগিয়া যাও। টাকা না পাইলেও দুঃখিত হইবার প্রয়োজন নাই। উদ্বেগে শরীর অবসন্ন হয়, চিত্তবিক্ষিপ্ত হয়—কার্য্য করিবার ক্ষমতা কমিয়া আসে।

 ভিক্ষাবিজ্ঞানের এই দ্বিতীয় সূত্র কার্য্যে পরিণত করা বড়ই কঠিন। অনেক সময়ে ধার করিয়া কাজ আরম্ভ করিয়াছি। পাওনাদারের বিল উপস্থিত—টাকা দিবার ক্ষমতা নাই। সেই সময়ে রাত্রে বিছানায় পড়িয়া এপাশ ওপাশ না করিয়া থাকা অসম্ভব। আমি অনেক স্থলেই আমার চিত্তের শান্তিরক্ষা করিতে পারি নাই—বহুরাত্রি না ঘুমাইয়া কাটাইয়াছি। রাস্তায় বা বারান্দায় পাগলের মত ছুটাছুটি করিতে হইয়াছে। অবশ্য এত দুরবস্থার মধ্যেও আমার ধীরতা এবং গাম্ভীর্য্য অনেকটাই ছিল। তাহা না হইলে এতদিন সহ্য করিয়া এককাজে লাগিয়া থাকিতে পারিতাম কি?

 সংসার দেখিয়া আমার জ্ঞান জন্মিয়াছে যে, জগতের যত বড় বড় কাজ সবই এইরূপ স্থিরচিত্ত সহিষ্ণুতাসম্পন্ন গাম্ভীর্য্যবিশিষ্ট কর্ম্মবীরগণের দ্বারা সম্পন্ন হইয়াছে। তাঁহাদের মাথার বোঝা বড় কম থাকে না। অসাধ্যসাধনেই তাঁহারা ব্রতী হইয়াছেন—নিতান্ত ‘না’কেও তাঁহাদের ‘হাঁ’তে পরিণত করিতে হইয়াছে। নৈরাশ্য বিফলতা এবং দৈন্যদারিদ্র্যের মধ্যে থাকিয়াই তাঁহাদিগকে বহু ব্যয়সাপেক্ষ বিশালকর্ম্মে হস্তক্ষেপ করিতে হইয়াছে। তথাপি তাঁহারা শান্ত গম্ভীর, এবং লোকপ্রিয় ও সৌজন্যবান্ রহিয়াছেন।