পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ ," - عـ $ oሕS রাতটা কাটাইয়া দিব। - শ্যামবাজারে যখন পৌছিলাম, তখন রাত বারটা বাজিয়া গিয়াছে। বাড়ীর দরজা বদ্ধ। দুই চারিবার কড়া নাড়িয়া যখন কোন সাড়া পাইলাম না, তখন ভাবিলাম “কুচ পরোয় নেহি ; আজি রাতটা কলিকাতার রাস্তায় না হয় ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইব ।” প্ৰাণে একটা নূতন রকম আনন্দের দেখা দিল। আজ বার বৎসর পরে খোলা রাস্তায় ছাড়া পাইয়াছি। সঙ্গে জেলার নাই, পেট অফিসার নাই, একটা ওয়ার্ডার পর্যন্ত নাই! অতীতের বন্ধন কাটিয়া গিয়াছে, নূতন বন্ধন এখন দেখা দেয় নাই। আজ সংসারে বাস্তবিকই আমি একা । কিন্তু এই একাকিত্ববোধের সঙ্গে কোন বিষাদের কালিমা জড়িত নাই, বরং একটা শান্ত আনন্দ উহার তালে তালে ফুটিয়া উঠিতেছে। শ্যামবাজার হইতে সাকুলার রোড ধরিয়া শিয়ালদহ ষ্টেশনের দিকে রওনা হইলাম। বার বৎসর জুতা পরা অভ্যাস নাই, সুতরাং আজ নূতন । জুতায় পা একেবারে ক্ষত বিক্ষত হইয়া গেল। জুতা খুলিয়া বগলে পুরিয়া চলিতে লাগিলাম। বগলে পুটুলী দেখিয়া রাস্তায় এক পাহারাওয়ালা ধরিয়া বসিল-কোথা হইতে আসিতেছি কোথায় যাইব ইত্যাদি ইত্যাদি। একবার মনে হইল সত্য কথা বলিয়া দিই যে আমি কালাপানির ফেরত আসামী ; তাহা হইলে আর কিছু না হোক, থানায় একটু মাথা গুজিবার জায়গা পাওয়া যাইবে । তাহার পর ভাবিলাম আর সত্যনিষ্টার বাড়াবাড়ি করিয়া কাজ নাই। একবার সত্য কথা বলিতে গিয়া ত । বার বৎসর কালাপানি ঘুরিয়া আসিলাম। শেষে বলিলাম-“আমি কালিঘাট হইতে আসিতেছি, শিয়ালদহ ষ্টেশনে যাইব ।” কনষ্টেবল সাহেব আমার বগলের পুটুলি পরীক্ষা করিয়া অনেকক্ষণ আমার মুখের দিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন—“তুমি কি উড়ে ?” বহু কষ্ট হাস্য সম্বরণ করিয়া বলিলাম-“হাঁ” । তখন তাহার নিকট হইতে যাইবার