পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 নির্বাসিতের আত্মকথা অরবিন্দ বাবু, দেবব্রত ও বারীন্দ্র ভিন্ন আর সকলেই এই হট্টগোলে । যোগ দিতে ; তবে মধ্যে মধ্যে উহারাও যে বাদ পড়িতেন-তাহা নহে । ধরা পড়বার পর বারীদ্রের মনে কোথায় একটা বিষম ধাক্কা লাগিয়াছিল বলিষ্মা মনে হয় ; সে প্ৰায় সমস্ত দিন একখানা চাদর মুড়ি দিয়া লম্বী হইয়া পড়িয়া থাকিত। দেবব্রত সকালে উঠিয়া পায়ের উপর পা তুলিয়া দিয়া সেই যে আচল প্ৰতিষ্ঠ হইয়া বাসিত, বেলা দশটা পৰ্যন্ত তাহাকে আর নড়িবার উপায় ছিল না । আহারাদির পর আবার বেলা চার পাঁচটা পৰ্যন্ত চুপ করিয়া বসিয়া থাকিত ; কখনও বা গীতা ও ভাগবত পড়িত। তাহার সময় এইরূপেই কাটিয়া যাইত। অরবিন্দ বাবুর জন্য একটা কোণ নির্দিষ্ট ছিল । সমস্ত প্ৰাতঃকাল তিনি সেইখানে আপনার সাধন ভজনের মধ্যে ডুবিয়া থাকিতেন। ছেলেরা চীৎকার করিয়া তঁহকে বিরক্ত করিলেও কোন কথাই কহিতেন না । অপরাহ্নে দুই তিন ঘণ্টা পায়চারী করিতে করিতে উপনিষদ বা অন্য কোনও ধৰ্ম্মশাস্ত্র পাঠ করিতেন। তবে সন্ধ্যাবেলায় এক আধা ঘণ্টার জন্য ছেলেখেলায় যোগ না দিলে তঁাহারও নিস্কৃতি ছিল না । কানাইলাল প্ৰভৃতি চার পাঁচজন নিদ্রার কাজটা সন্ধ্যার পরেই সারিয়া লইত। রাত ১০টা ১১টার সময় সকলে যখন ঘুমাইয়া পড়িত তখন তাহারা বিছানা ছাড়িয়া কাহার কোথায় সন্দেশ, আম বা বিস্কুট লুকান আছে তাহার সন্ধান করিয়া ফিরিত। যে দিন সে সব কিছু মিলিত না, সে দিন এক এক গাছা দড়ি দিয়া কাহারও হাতের সহিত অপরের কাছ বা কাহারও কাণের সহিত অপরের পা বঁাধিয়া দিয়া ক্ষুন্নমনে শুইয়া পড়িত। একদিন রাত্রে প্রায় ১টার সময় ঘুম ভাঙ্গিয়া দেখি কানাই । একজনের বিছানার চাদরের তলা হইতে একটা বিন্ধুটের টন চুরি করিয়া মহানন্দে বগল বাজাইতেছে। অরবিন্দ বাবু পাশেই শুইয়াছিলেন।