পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ११ সরাইয়া হাঁসপাতালে ইউরোপীয় প্রহরীর তত্ত্বাবধানে রাখা হইয়াছিল। পাছে কেহ তাহাকে আক্রমণ করে সেই ভয়ে জেলের কর্তৃপক্ষগণ সৰ্ব্বদাই সাবধান হইয়া থাকিতেন। জেলার বেচারী একদিন বলিলেন-“দেখুন, আমার হয়েছে তালগাছের আড়াই হাত। তালগাছ সবটা চড়া যায়, কিন্তু শেষ আড়াই হাত উঠিবার সময় প্ৰাণটা বেরিয়ে যায়। এতদিন চাকরী করে এলুম, বেশ নিৰ্ব্বিবাদে কেটে গেল। আর এই পেনসন নেবার সময় আপনাদের হাতে গিয়ে পড়েছি। এখন মানে মানে আপনাদের বিদেয় করতে পারলে বাচি ।” কিন্তু অদৃষ্টর পরিহাস! তালগাছের শেষ আড়াই হাত আর তঁহাকে চড়িতে হইল না। ম্যাজিষ্ট্রেট আমাদের মোকদ্দমা সেসনে পাঠাইয়া নিশ্চিন্ত হইলেন। আমরাও লম্বা ছুটি পাইলাম। নিষ্কৰ্ম্মার দল-কাজেই সকলেই হাসে, খেলে, লাফালাফি করে, মোকদ্দমার ফলাফল লইয়া মাঝে মাঝে বিচার বিতর্কও করে। ছেলেরা কাহাকেও বা ফাসিকাঠে চড়ায়, কাহাকেও বা খালাস দেয় । কানাইলাল একদিন বলিল “খালাসের কথা ভুলে যাও, সব বিশ বৎসর করে কালাপানি।” শচীনের তাহাতে ঘোরতর আপত্তি । সে প্ৰমাণ করিতে বসিল যে বিশ বৎসরের মধ্যে দেশ মুক্ত হইবেই হইবে। কানাইলাল খানিকক্ষণ গম্ভীর ভাবে বসিয়া থাকিয়া বলিল—“দেশ মুক্ত হোক আর না হোক, আমি হবো। বিশ বৎসর জেলখাটা আমার পোষাবে না।” এই কথার দুই একদিন পরেই একদিন সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ পেটে হাত দিয়া শুইয়া পড়িয়া সে বলিল যে তাহার পেটে ভারি যন্ত্রণা হইতেছে। ডাক্তার বাবু আসিয়া । তাহাকে হাসপাতালে পঠাইয়া দিলেন। সেই অবধি সে হাসপাতালেই রহিয়া গেল। মেদিনীপুরের সত্যেনকে কিছু দিন পূর্বে পুলিস ধরিয়া আনিয়াছিল। কঠিন কাশীরোগগ্ৰস্ত বলিয়া সেও হাসপাতালেই থাকিত। .