পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়নি। অন্ধকার না হোলে ওসব বেরুতে পারে না। রাম নামে ভূত পালায়।

 সত্যি, আর কিন্তু হাঁটতে পারচিনে। কেউটেপাড়া এখনো কত দূর! ওই দূরে বাঁশবন দেখা যাচ্চে কেউটেপাড়া গ্রামের। এখনো অনেক দূর। এই বড় মাঠটা পার হতে হবে, জনপ্রাণী নেই। এই সন্দের সময় মাঠে! কেউ দেখবার নেই!

 কেন গোপাল আমায় তাড়িয়ে দিলে বোর্ডিং থেকে? আমার ভয়ানক জ্বর এসেচে। আবার জ্বর এসেচে। কেউটেপাড়া কতদূর? চোখে যেন সর্যের ক্ষেত দেখচি চারদিকে! পুরুত ঠাকুরের স্ত্রী রাগ করে বলেচেন—মাগো, ছেলেটার শুধু জ্বর আর জ্বর! পরের আপদ কে দেখাশুনো করে? আজই বিদেয় করে দাও।

 ননী মাস্টার বলেচে—ওর পা ফুলেচে, ও বাঁচবে না। ও এবার যাবে।

 ডানদিকে একটা বড় আমগাছ রাস্তার ধারে। ঐখানে একটু শুয়ে জিরিয়ে নেবো? আর এক দাগ ওষুধ খাবো? আর হাঁটতে পারচিনে। ভীষণ জ্বর এসেচে।

 হঠাৎ আমার মনে হোল ওই জামতলাতেই মা আঁচল বিছিয়ে বসে আছেন! আমি আসবো বলেই কখন থেকে বসে আছেন। মা এগিয়ে এসেচেন আমায় নিতে।

 আমি টলতে টলতে মার কোলে শুয়ে পড়ি। মাথায় একটা কিসের চোট লাগলো! তারপর আমার আর জ্ঞান নেই। অন্ধকার নামলো মাঠে।

৯৫