পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হাওয়া বইছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম। সেই কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টির পরই বাদলা নেমে গিয়েছে। একটা চাঁপাগাছের ফোটা চাঁপাফুল থেকে বর্ষার হাওয়ার সঙ্গে মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে। ব্যাঙ ডাকছে নরহরি বোষ্টমের ডোবায়।

 আমাদের দলের সর্দার বিধুর নির্দেশমত এ মিটিং বসেছিল। বাক্স ফেরত দিতেই হবে—এ আমাদের প্রথম ও শেষ প্রস্তাব। মিটিং-এ সে প্রস্তাব পেশ করার আগেই মনে মনে আমরা সবাই সেটি মেনেই নিয়েছিলাম। বিধুকে জিজ্ঞেস করা হোল বাক্স ফেরত দেওয়া সম্বন্ধে আমরা সকলেই একমত, অতএব এখন উপায় ঠাওরাতে হবে বাক্সের মালিককে খুঁজে বার করবার। কারো মাথায় কিছু আসে না। এ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা হোল। যে কেউ এসে বলতে পারে বাক্স আমার। কি করে আমরা প্রকৃত মালিককে খুঁজে বার করবো? মস্ত বড় কথা। কোনো মীমাংসাই হয় না।

 অবশেষে বিধু ভেবে ভেবে বললে—মতলব বার করিছি। ঘুড়ির মাপে কাগজ কেটে নিয়ে আয় দিকি।

 বলেছি—বিধুর হুকুম অমান্য করার সাধ্য আমাদের নেই। দু’তিনখানা কাগজ ঐ মাপে কেটে ওর সামনে হাজির করা হোল।

 বিধু বললে—লেখ—বাদল লিখুক। ওর হাতের লেখা ভালো।

 বাদল বললে—কি লিখবো বলো—

 —লেখ বড় বড় করে। বড় হাতের লেখার মত। বুঝলি? আমি বলে দিচ্ছি—

 —বল—

 —আমরা এক বাক্স কুড়িয়ে পেয়েছি। যার বাক্স তিনি রায়বাড়িতে খোঁজ করুন। ইতি—বিধু সিধু নিধু তিনু।

 আমি আর বাদল আপত্তি করে বললাম—বারে, আমরা কুড়িয়ে পেলাম, আর আমাদের নাম থাকবে না বুঝি? আমাদের ভালো

১০০