পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ওদের ঘরের দাওয়ায় একজন খুনখুনে বুড়ি ছেড়া কঁথা গায়ে শুয়ে আছে অনেকক্ষণ থেকে লক্ষ্য করছিলাম। গণেশদাদাকে জিজ্ঞেস করাতে ও বললে-আরে ও সেই রতনের মা, ওরে চেনে না ? রতন ঘর ছেড়ে পালিয়েচে এক বাগদি মাগীকে নিয়ে। ওর মা যায় কনে ? কেউ দেখে না। দুদিন না খেয়ে ঘরের মধ্যে পড়েছিল। তাই ওরে এনে রেখে দেলাম মোর এখানে। চকির ওপর না খেয়ে মরবো পাড়া পিরতিবাসী-চকি কি দ্যাখা যায় ? তাই ওরে এনে রেখে দেলাম। যদি মোদের জোটে, তোমারও একবেলা জোটবে। তাও নড়তে পারে না, জ্বর, ছদি, কাশি। একটু হুমনেপাতি ওছুদ এনে দিয়েলাম যগানন্দপুরের ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে। দু, আনা দাম নিয়েল-তা। যদি কোনো উপগার হোলো দাদাঠাকুর-তুমি জানো হুমনেপাতি ? --না। আমি জানিনে । আচ্ছা আমি দেখবো এখন ওবেলা ওষুধের ব্যবস্থা। --কি দেবো তোমারে দাদাঠাকুর তাই ভাবচি —কিছু দিতে হবে না। তুমি কথা বলে আমি শুনি কিন্তু কথা কইতে গণেশদাদা জানে না । তার সংকীর্ণ জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে যে অভিজ্ঞতা সে সঞ্চয় করেছে আজ পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন বছর ধরে, সে যতই সামান্য হোক, বলতে জানলে তাই নিয়েই চমৎকার কথার জল রচনা করা যেতে যা আকাশকে বাতাসকে রাঙিয়ে দিতে পারতো, শুকনো ডালে ফুল ফোটাতে পারতোচামিটার বিলের পদ্মফুলের পদ্মগন্ধি রেণু আমার নাকে উড়িয়ে নিয়ে আসতে পারতো। গণেশদাদা সে সব পারে না। তবুও ওর সঙ্গ আমার এত ভালো লাগে। কথার দরকার হয় না, ওর নিকপকরণ ও অনাড়ম্বর সাহচৰ্যই আমার মনে একটি মৌন লিরিকের আবেদন বহন করে আনে। সেবার চলে আসার পর পাঁচ ছ’ বছর হবে গণেশদাদার সঙ্গে আবার দেখা । Σ ΣΑΕ