পাতা:নীল তারা ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বান্দ্বিক কবিতা
১২১

 কিছু কাল এই রকমে চলল, তার পর ক্রমশ ধূর্জটির হুঁশ হল মানসী প্রিয়ার সঙ্গে তার বিবাহিত প্রিয়ার মিল নেই। শংকরী কাব্যরস বোঝে না, তার মনে রোমান্স নেই। বিয়ের সময় সে আত্মীয় আর বন্ধুদের কাছ থেকে বিস্তর সস্তা উপহার পেয়েছিল। তার উদ্দেশে লেখা ধূর্জটির কবিতাগুলোও যেন তার কাছে মামুলী উপহারের শামিল। সে সংসারের কাজ আর তার নবজাত খোকাকে নিয়েই ব্যস্ত। ধূর্জটি যেচারা আবার তার কাল্পনিক প্রিয়ার উদ্দেশে চুটিয়ে কবিতা লিখতে লাগল আর শংকরী সাংসারিক কাজে ডুবে রইল।

 তার পর হাঙ্গামা বাধাল বিশাখা। সে আমার খুড়তুতো শালী, অত্যন্ত ফন্দিবাজ মেয়ে, ধূর্জটির বউ শংকরীর সঙ্গে এক কলেজে পড়েছিল। তার স্বামী নরেশ এঞ্জিনিয়ার, আগে কাঁচড়াপাড়ায় কাজ করত, তার পর বদলী হয়ে কলকাতায় এল, ধূর্জটির বাড়ির পাশেই বাসা করল। বিশাখাকে কাছে পেয়ে শংকরী খুব খুশী হল।

 একদিন বিশাখা বলল, তোমার বর তো একজন বিখ্যাত কবি। আজকাল কবিতার বই কেউ কেনে না, কিন্তু ধূর্জটিবাবুর বই বেশ বিক্রি হয় শুনেছি। আচ্ছা, উনি কার উদ্দেশে অত প্রেমের কবিতা লেখেন? তোমার জন্যে নিশ্চয় নয়, তা হলে ‘স্বপ্নে দেখা অচিন প্রিয়া’ এই সব লিখতেন না।

 শংকরী বলল, কারও উদ্দেশে লেখে না। কবিরা খেয়ালী লোক, মনগড়া একটা কিছু খাড়া করে তার উদ্দেশে লেখে।