পাতা:নীল তারা ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
নীল তারা ইত্যাদি

এসেছে, পুরুত তাকে মন্ত্র পড়াচ্ছে—আম্র চুরি জাম্র চুরি, ভাদ্রমাসে ধান্য চুরি, মন্দ স্থানে রাত্রিযাপন, মদ্যপান আর কুঁকড়া ভক্ষণ, হক্কল পাপ বিমোচন, গঙ্গা গঙ্গা।—সেই রকম নাকি?

 —হাঁ। আজ তোরাই আমার ফাদার কনফেসার। আমার ইতিহাসটা বলছি শোন।—

নেক বছর আগেকার কথা। তখন আমার বয়েস আঠারো-উনিশ, নাম ছিল হাবুলচন্দ্র। লেখাপড়া বেশী শিখি নি, অবস্থা খুব খারাপ, বাড়িতে মা ছাড়া কেউ ছিল না। মারা যাবার আগের দিন মা বললেন, বাবা হাবুল, এই পাড়াগাঁয়ে বেকার বসে থাকিস নি, দহরমগঞ্জে তোর কাকার কাছে যাবি, যা হক একটা হিল্লে লাগিয়ে দেবেন।

 মা মারা গেলে দহরমগঞ্জে গেলাম, বেশ বড় জায়গা। কাকা ওখানকার মস্ত কারবারী গয়াপ্রসাদ প্রয়াগদাসের ফার্মে চালান লিখতেন। এই ফার্মের পত্তন করেছিলেন গয়াপ্রসাদ। তিনি গত হলে তাঁর ছেলে প্রয়াগদাস মালিক হন। আমি যখন ওখানে যাই তখন প্রয়াগদাসের বয়েস আন্দাজ পঞ্চাশ। গুটিকতক নাবালক ছেলে মেয়ে আছে, দ্বিতীয় পক্ষের একটি স্ত্রীও আছে। প্রয়াগদাস বাতে পঙ্গু হয়ে প্রায় বিছানাতেই শুয়ে থাকতেন, অগত্যা তাঁর খুড়তুতো ভাই বৃদ্ধিচাঁদকে ম্যানেজার করে ব্যবসা চালাবার সমস্ত ভার দিয়েছিলেন। বৃদ্ধিচাঁদের বয়েস প্রায় তিরিশ, নিঃসন্তান, স্ত্রী গত হলে আর বিয়ে করেন নি।