পাতা:নীল তারা ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিলোত্তমা
২৭

 —ও হল ইংরিজীর অন্ধ নকল, কণ্ঠস্বর সোনালী রুপুলী হয় না। সোনা রুপোর আওয়াজও ভাল নয়। বরং স্টীলের তারের সঙ্গে তুলনা দেওয়া যেতে পারে, যেমন বীণার ঝংকার কিংবা দামী ঘড়ির গংএর ডিং ডং। তার পর শুনুন। রামদাস চুঞ্চু তিলোত্তমার বিবরণ শুনে প্রশ্ন করলেন, তার সঙ্গে তোমার আলাপ হয়েছে?

 বললুম, আলাপ কোত্থেকে হবে সার, সে থাকে বোম্বাইএ। তাকে কোনও দিন সশরীরে দেখি নি, শুধু ছবিতেই তার মূর্তি দেখেছি, ছবিতেই তার কথা আর গান শুনেছি।

 চুঞ্চু মশায় সহাস্যে বললেন, বেশ বেশ! কায়া দেখনি, শুধু ছায়া দেখেছ। এখন শুয়ে শুয়ে ছায়াও দেখছ না, শুধু মায়া দেখছ। ভয় নেই, আমি তোমাকে উদ্ধার করব। সাংখ্য দর্শনে বলে—প্রকৃতি এক, আর পুরুষ অনেক। পুরুষ আসলে শুদ্ধ বুদ্ধ নির্বিকার, কিন্তু তার সামনে যখন প্রকৃতি সেজেগুজে নৃত্য করে তখন পুরুষের বিকার হয়, সে ভবযন্ত্রণা ভোগ করে। প্রজ্ঞা লাভ করলেই পুরুষের নেশা ছুটে যায়, প্রকৃতি অন্তর্হিত হয়। তুমি একজন পুরুষ, তিলোত্তমারূপী প্রকৃতি তোমার সামনে নেচেছিল, এখনও তোমার মনের মধ্যে নাচছে, তাই তোমার এই দুর্দশা। বৎস সিদ্ধিনাথ প্রবুদ্ধ হও, তোমার পৌরুষ দেখাও, প্রকৃতিকে ধমক দিয়ে বল, দূর হ মায়াবিনী। ভাগো গেট আউট। ক্ষুদ্র হৃদয়দৌর্বল্য ঝেড়ে ফেলে দিয়ে মোহমুক্ত হয়ে কৈবল্য লাভ কর।