পাতা:নীল তারা ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিলোত্তমা
২৯

গুরুত্ব আর আপেক্ষিক গুরুত্ব ভার আর সংঘাত গুলিয়ে ফেলেছ।

 আমি বললুম, খাই বলুন সার, আপনার অদ্বৈতবাদে কোনও ফল হবে না। তিলোত্তমা হচ্ছে আলোকসামান্যা নারী, তার সঙ্গে অন্য কারও তুলনাই হতে পারে না। তার চেহারা অভিনয় আর গান আমাকে জাদু করেছে।

 চুঞ্চু মশার বললেন, তবে কাণ্ডজ্ঞান প্রয়োগ কর, যাকে বলে কমন সেন্স। পক্ষিরাজ ঘোড়া, আকাশকুসুম, শিংওয়ালা খরগোশ এ সবে বিশ্বাস কর?

 —আজ্ঞে না, ওসব তো কল্পনা, কিন্তু তিলোত্তমা বাস্তব।

 —একবারেই ভুল। কবি খুব হাতে রেখেই বলেছেন, অর্ধেক কল্পনা তুমি অর্ধেক মানবী। তোমার তিলোত্তমা অর্ধেক নয়, পনরো আনা কল্পনা। তুমি তার কতটকু জানহে ছোকরা? তার মূর্তিটা জোড়াতালি দিয়ে তৈরী; তার ভাষা নিজের নয়, নাট্যকারের; তার গানও নিজের নয়, অন্য মেয়ে আড়াল থেকে গেয়েছে। একটা কৃত্রিম মানবীর চিত্রার্পিতা ছায়া দেখে তুমি ভুলেছ। তার মেজাজ তুমি জান না, হয়তো খেঁকী কুঁদুলী, হয়তো নেশা করে, হয়তো দেমাকে মটমট করছে, হয়তো তার কালচারও বিশেষ কিছু নেই।

 একটু ভেবে আমি বললুম, পণ্ডিত মশায়, আপনার কথা শুনে এখন মনে পড়ছে—তিলোত্তমা সরোবরকে সড়োবড়, জিহ্বাকে জেহোভা, আর প্রেমকে ফ্রেম বলেছিল।