পাতা:নীল তারা ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
নীল তারা ইত্যাদি

বাবু, আপনি খাবার পরিবেশন করুন, খেতে খেতেই কথা হবে। শুনুন মশাইরা।—

যুদ্ধের সময় সত্যিই আমি নর্থ বর্মায় মিলিটারিতে চাকরি করতুম। বেরাল্লিশ সালের গোড়ায় যখন জাপানীরা রেঙ্গুনে বোমা ফেলতে লাগল তখন ইংরেজের ওপর আর ভরসা রইল না, প্রাণের ভয়ে আমরা সবাই পালালুম। টামু-ইম্ফল রোড দিয়ে দলে দলে নানা জাতের মেয়ে পুরুষ ছেলে বুড়ো চলল, রোগে আর অপঘাতে কত যে মারা গেল তার সংখ্যা নেই। কাগজে সে সব কথা আপনারা পড়েছেন। অনেক কষ্টে আমি যখন বর্মা বর্ডার পার হয়ে ইম্ফলে এলম তখন একটি মেয়ে আমার শরণাপন্ন হল। বড় করুণ কাহিনী তার, অল্প বয়সে অনেক দুঃখ পেয়েছে। স্বামীর নাম বলহরি জোয়ারদার, রেঙ্গুনে তার মোটর মেরামতের কারখানা ছিল, ভালই রোজগার করত। জাপানীরা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেল, তাদের মোটর মেকানিকের বড় অভাব ছিল কিনা। যাবার সময় বলহরি তার বউকে বলল, অচলা, চললুম, এ জীবনে হয়তো আর দেখা হবে না। তুমি যেমন করে পার পালাও, দেশে ফিরে যাবার চেষ্টা কর। অচলা কাঁদতে কাঁদতে একটি বাঙালী দলের সঙ্গে রওনা হল। দলের সবাই একে একে মারা গেল, কলেরায়, টাইফয়েডে, বাঘের পেটে। অবশেষে অচলা আধমরা অবস্থায় মণিপুরে পৌঁছুল। আমার স্বভাবটা কি রকম জানেন, লোকের দুঃখ দেখতে পারি না, বিশেষ করে মেয়েছেলের।