পাতা:নীল তারা ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নীল তারা ইত্যাদি

পর দশ বৎসর কেটে গেছে, এখন রাখাল বেহালায় তার পৈতৃক বাড়িতেই থাকে এবং আবার জুবিলি স্কুলে মাস্টারি করছে।

 যখনকার কথা বলছি তখন রাখালের বয়স প্রায় তেত্রিশ। সুপুরুষ, কিন্তু চেহারার যত্ন নেয় না, উস্কখুস্ক চুল, দাড়ি কামায় না, তাতে একটু পাকও ধরেছে। পাড়ার লোকে বলে পাগলা মাষ্টার। সেকালে লোকে অল্প বয়সে বিবাহ করত, কিন্তু রাখাল এখনও অবিবাহিত। বাড়িতে সে একাই থাকে, তার মা দু বৎসর আগে মারা গেছেন।

 রবিবার, সকাল আটটা। রাখাল তার বাইরের ঘরের সামনের বারান্দায় একটা তক্তপোশে বসে হুঁকো টানছে আর কবিতা লিখছে। বাড়ি থেকে প্রায় এক শ গজ দূরে একটা আধপাকা রাস্তা এঁকে বেঁকে চলে গেছে। রাখাল দেখতে পেল, একটা ভাড়াটে ফিটন গাড়ি এসে থামল, তা থেকে দুজন সাহেব আর একজন বাঙালী নামল। গাড়ি দাঁড়িয়ে রইল, আরোহীরা হনহন করে রাখালের বাড়ির দিকে এগিয়ে এল।

 সাহেবদের একজন লম্বা রোগা, গোঁফদাড়ি নেই, গাল একটু তোবড়া, সামনের চুল কমে যাওয়ায় কপাল প্রশস্ত দেখাচ্ছে। অন্য জন মাঝারি আকারের, দোহারা গড়ন, গোঁফ আছে, একটু খুঁড়িয়ে চলেন। তাঁদের বাঙালী সঙ্গীটি কালো, পাকাটে মজবুত গড়ন, চুল ছোট করে ছাঁটা, গোঁফের ডগা পাক দেওয়া, পরনে ধুতি আর সাদা ড্রিলের কোট। রাখাল হুঁকোটি রেখে অবাক হয়ে আগন্তুকদের দিকে চেয়ে রইল।