পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উঠেছিল। সুভাষবাবুর বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে সমস্ত লোকে মুক্ত হস্তে এই অর্থভাণ্ডারে সাহায্য করতো। অনেকে এই জন্যে সর্বস্বান্ত পর্যন্ত হয়েছেন। সুভাষবাবু যখনই বক্তৃতা দিতেন তখন ২০ থেকে ২৫ হাজার নরনারী এসে সমবেত হত এবং বোদ জল ঝড় উপেক্ষা করে ক্রমান্বয়ে চার পাঁচ ঘণ্টা ধরে তারা এই বক্তৃতা মন্ত্রমুগ্ধের মত শ্রবণ করতো। এই সব বক্তৃতাসভায় প্রচুর টাকা সংগৃহীত হত। প্রত্যেক সভাতেই সুভাষবাবুকে মাল্যে ভূষিত করা হত এবং সভাশেযে এই মালা নিয়ে নীলাম করা হত। প্রথম বক্তৃতা শেষে এই মালা নীলাম করে ওঠে এক লাখ টাকা, দ্বিতীয় বক্তৃতায় দু’লাখ, তৃতীয় বক্তৃতায় ৩ লাখ এবং চতুর্থ বক্তৃতায় ১২ লাখ টাকা। ১২ লক্ষ টাকা! অবিশ্বাসী মন বিশ্বাস করবে কি? শোনা যায় এক পাঞ্জাবী ভদ্রলোক তাঁর সমস্ত সম্পত্তির বিনিময়ে একবার একটি মালা ক্রয় করেছিলেন।

 ২১শে অক্টোবর ১৯৪৩। এই দিন পূর্ব এশিয়ার—শুধু পূর্ব এশিয়ার কেন সমগ্র ভারতবাসীর পক্ষে এক স্মরণীয় দিন। এই দিন সিঙ্গাপুরে মিউনিসিপ্যাল ময়দানে ভোর হতেই এক অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারণা। সেদিন সমস্ত মুক্তি সেনা সব জাতি ধর্ম নিবিশেষে এসে মিলিত হয়েছে এই প্রাঙ্গণে। সামরিক কায়দায় দাঁড়িয়েছে গান্ধী বাহিনী, নেহরু বাহিনী, আজাদ বাহিনী, সুভাষ বাহিনী আর তাদেরই সাথে হাতে হাত মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে ঝাঁসী বাহিনীর নারী সেনার দল। এই সৈন্য বাহিনী ছাড়া বহু জাপানী জার্মানী ও ইটালিয়ান অফিসারও এসে মিলিত হয়েছেন। সব জড়িয়ে লক্ষাধিক নরনারীর এক বিচিত্র সমাবেশ। আর সবার মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গবীর সুভাষচন্দ্র বসু। মাথার ওপর সুউচ্চ দণ্ডে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা উড়ছে। এই সম্মিলনে, এই ত্রিবর্ণ পতাকার নীচে, এই নেতার এক নায়কত্বে আজাদ-হিন্দ-ফৌজের ব্রত সুরু হল।

 আজ থেকে সবার সাথে সুর মিলিয়ে দেশগৌরব সুভাষচন্দ্রকে আমরা

১০০