পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নেতাজী বলে ডাকবো। আজ থেকে প্রত্যেক ভারতীয়কে এক মাত্র শব্দে অভিবাদন জানাবো—একটি মাত্র শব্দে ঘুমন্ত ভারত সোণার কাঠির স্পর্শ পেয়ে জাগ্রত হয়ে উঠবে একটি মাত্র শব্দ চোখের সামনে ভাস্বর করে দেবে দিল্লী চলার পথ—সবার সঙ্গে সুর মিলিয়ে সেই মন্ত্র আমরা উচ্চারণ করবো—‘জয় হিন্দ’। একদিন বাঙ্গলার সাধক বঙ্কিমচন্দ্র মহামন্ত্র উচ্চারণ কবেছিলেন— বন্দে মাতরম্‌—সেই মন্ত্রে উদ্বেল হয়ে উঠেছিল সমস্ত ভারতের নিদ্রিত জনতরঙ্গ। তারপর বহু দুর্যোগ গেছে, বহু নির্যাতন, বহু উত্থান পতন, তারপর আবার এই মন্ত্র উচ্চারিত হল সেই মহামন্ত্রেরই আর এক অখণ্ড প্রকাশ—ইষ্টদেবী দেশমাতৃকার বীজ মন্ত্র—‘জয় হিন্দ’।

 হে হত চেতন ভারতবাসী মনে রেখো ২১শে অক্টোবর তোমার কি দিন! যুগে যুগে তুমি স্মরণ করো এই দিন এক দল বিপ্লবী ভারতসন্তান স্বাধীন ভারতেব পূর্ব-দিগন্তে দাঁড়িয়ে পশ্চিম দেশের বর্বর সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশের বিরুদ্ধে—বৃটিশের মিত্র আমেবিকার বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। অসহযোগ আন্দোলন নয়, বিক্ষুব্ধ মনের ব্যর্থ আস্ফালন নয়, বক্তৃতার ফাঁকা বুলি নয়, কমিউনিজমেব বিশ্বজনীনতার ভণ্ডামীও নয়—রীতিমত যুদ্ধের আহ্বান, কামানের বিরুদ্ধে কামানের প্রতিধ্বনি! অসির বিরুদ্ধে অসির ইস্পাত!—রক্তের বদলে রক্ত!

 নেতাজী সবার মাঝে দাঁড়িয়ে অভিবাদন গ্রহণ করলেন। এ অভিবাদন যুক্তকরের বিনীত প্রণাম নয়, এ অভিবাদন গগন প্রকম্পিত জয়ধ্বনি নয়—এ অভিবাদন তারা জানালো হাজার হাজার উন্নত বেয়নেটের জৌলুস দিয়ে। আনন্দে, গর্বে, উত্তেজনায় হতবাক হয়ে গেলেন নেতাজী। পনেরো মিনিট ধরে নিস্পন্দ হয়ে চেয়ে রইলেন সেই জাগ্রত জনতার দিকে। নিস্পন্দ হয়ে রইলো সেই লক্ষাধিক মানুষ নেতাজীর পানে চেয়ে। যারা অস্ত্র তুলে ছিল তারা নামাতে পর্যন্ত ভুলে গেল। সকলের দৃষ্টিতে সে এক অভিনব আশার আলো। সেই আলোতে ফুটে উঠছে দিল্লী যাওয়ার সুদীর্ঘ কণ্টকময় পথ,— সে পথে নতুন

১০১