পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এই সময় তার ইংরাজবিদ্বেষ এমন বেড়ে গিয়েছিল যে তিনি লিখেছিলেন, যখন দেখি শ্বেতাঙ্গ লোকেরা আমার জুতো বুরুশ করছে তখন আমার সবচেয়ে বেশী আনন্দ হয়।’

 এই সময়ে লণ্ডনে শ্রীমতী রায় ও শ্রীমতী নাইডু খুব সুন্দর সব বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। সুভাষচন্দ্র এই সব বক্তৃতায় আকৃষ্ট হয়ে লিখেছিলেন, এসব শুনে মনে হয় যে-দেশে এই সব মহিলার জন্ম হতে পারে সে-দেশের ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল হয়ে পারে না।

 লণ্ডনে থাকবার সময়ে তিনি খুব সংযতভাবে এবং যথাসম্ভব স্বল্পব্যয়ে থাকতেন। কিন্তু তার সাজসজ্জায় ও চালচলনে এতটুকুও কেতাদুরস্ততার অভাব দেখা যেত না। ১৯২৯ খৃষ্টাব্দে মাত্র নয় মাসের মধ্যেই তিনি আই. সি. এস. পরীক্ষায় খুব কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করে চতুর্থ স্থান অধিকার করলেন এবং ইংরাজীতে প্রথম হলেন। ইতিমধ্যে কেম্বি জ থেকে নীতি বিজ্ঞানে ট্রাইপোজ উপাধি লাভ করেছিলেন। এই দুটো সম্মানই যে কোন ভারতীয়ের পক্ষে গৌরবের বিষয়। কিন্তু তিনি নিজে আই. সি এস পরীক্ষার এই কৃতকার্যতায় হতাশ হয়ে পড়লেন। তিনি লিখলেন, আমার দুভাগ্য যে আমি এতে পাশ করেছি। সত্যি সত্যিই তার আশঙ্কা হয়েছিল যে শেষে বাধ্য হয়েই তাকে চাকরী নিতে হবে। তাই চাকরী পাওয়ার পর তিনি অনেক চেষ্টায় পদত্যাগ পত্র দাখিল করে সেটা মঞ্জুর করিয়ে নিলেন। তিনি লিখেছিলেন, একই সঙ্গে দু’জন মনিবের সেবা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দু’জন মনিব অর্থে—এক: ইংরাজ সরকার আর দুই: আমার দেশ।

 ভোগের উপচারকে ত্যাগ করে তিনি বরণ করে নিলেন আত্মত্যাগের ব্রত।

 দেরী করবার সময় নেই। তাই যেদিন জাহাজ এসে ভিড়লে বোম্বাই বন্দরে সেইদিনই বিকেলে (১৬ই জুলাই ১৯২১) সুভাষচন্দ্র দেখা করলেন মহাত্মা গান্ধীর

১০