পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেশের সর্বদলীয় নেতাদের বিশ্বাস যে নেতাজী এখনও জীবিত অবস্থায় অন্য কোন দেশে আরও বৃহত্তর কিছু পরিকল্পনাকে রূপ দেবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। বিংশ শতাব্দীর মানুষ দেবতা মহাত্মা গান্ধী পর্যন্ত বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি সুভাষ এখনও বেঁচে আছে। সে এখন লুকিয়ে আছে, সময় হলেই ঠিক বেরিয়ে আসবে। ভগবানের আশীর্বাদে এই বিশ্বাস সত্য হোক আমাদের এইমাত্র কামনা।

 সুভাষবাবুর এই কর্মবহুল চাঞ্চল্যকর প্রবাস জীবনের মধ্যে তাঁর পরিবারে দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথমটি হল তাঁর অন্তর্ধানের একবছরের মধ্যেই সারদার মৃত্যু। এই সারদার সেবাযত্নের মধ্যেই সুভাষচন্দ্র আবাল্য পালিত। তিনি সারদাকে মায়ের মত ভক্তিশ্রদ্ধা করতেন। দ্বিতীয় দুর্ঘটনা সুভাষচন্দ্রের জননী রত্নগর্ভা প্রভাবতী দেবীর পরলোক গমন। ১৯৪৩ সালের ৮ই ডিসেম্বর কোলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে পর্যন্ত প্রবাসী সন্তানের জন্য আশীর্বাদের ও কল্যাণ কামনার নীরব অভিব্যক্তিতে তাঁর মুখ এক অপূর্ব দীপ্তিতে ভাস্বর হযে থাকতে আমরা দেখেছি। স্বর্গ থেকে তিনি আজ তাঁর স্নেহের সুভাষের দিগ্বীজয়ী অভিযান দেখছেন।


 আমাদের মত নগণ্য লোকের তাঁর মত বিরাট ব্যক্তিত্বের সমালোচনা করতে যাওয়া অন্যায়,—শুধু অন্যায় কেন বাতুলতা। তবু, নিছক ইতিহাসের খাতিরে আমাদের কিছু বলতে হবে। আজাদ-হিন্দ-ফৌজের ইতিহাস পড়ে প্রত্যক্ষ জয়লাভের ইঙ্গিত আমরা পাই না বটে কিন্তু পরোক্ষভাবে সুভাষচন্দ্র কি ভাবে জয়ী হয়েছেন সে বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট ধারণা হয়।

 বরাবরই সুভাষচন্দ্র বিপ্লবপন্থী। গান্ধীবাদের অমোঘ প্রভাব যখন সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে বাস্তবিকপক্ষে তখনই রাজনীতিক্ষেত্রে সুভাষচন্দ্রের উদয়। সুভাষচন্দ্র মনেপ্রাণে গান্ধীজীকে শ্রদ্ধা করেন এবং ভারতের শ্রেষ্ঠ জননায়ক হিসাবে মেনে নিয়ে চলেন। এমন কি সুদূর ব্রহ্মদেশে যেখানে তাঁর নিজ হাতে গড়া

১৩৮