পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সুভাষচন্দ্রের কাজ কতখানি সম্ভব হতে পারে। কিন্তু ক্রমে ক্রমে সুভাষবাবুর দল যখন সংখ্যায় অত্যন্ত বেশী বেড়ে উঠতে লাগলো এবং তার তত্বাবধানে তারা অদ্ভুত বকমের শিক্ষিত হয়ে উঠতে লাগলো তখন কর্তৃপক্ষ বুঝলেন এখনই এই বাহিনী ভেঙ্গে দেওয়া দরকার। এবং তার সুযোগও এসে গেল।

 এই সময় কথা হল রাজপুত্র প্রিন্স অব ওয়েলস্ ভারত পরিভ্রমণে আসছেন। সরকার থেকে হুকুম দেওয়া হল তার জন্যে সমস্ত দেশ সজ্জিত করা হবে। কিন্তু মহাত্মাজী আদেশ দিলেন প্রিন্স অব ওয়েলসের আগমনে ভারতবাসীর পক্ষে আনন্দ জয়ধ্বনি করার কিছুই নাই। যে ইংরাজ মহাযুদ্ধে ভারতের অসামান্য ত্যাগের মর্যাদা দেয় নি সেই ইংরাজসিংহাসনের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীর আগমনে সর্বদেশব্যাপী হরতাল পালন করতে হবে। সরকার পক্ষ বললেন যে, রাজপুত্র আসছেন ভারতকে তার অসামান্য ত্যাগের জন্য ধন্যবাদ জানাতে। কিন্তু এ প্রবঞ্চনায় দেশবাসী বিভ্রান্ত হল না। প্রিন্স অব ওয়েলস যেদিন এসে নামলেন বোম্বাই বন্দরে সেদিন চতুর্দিকে হরতাল পালিত হল।

 ২৫শে ডিসেম্বর প্রিন্স অব ওয়েলসের কোলকাতা আসবার কথা। কোলকাতাও বোম্বাই সহরের পুনরভিনয়ের জন্যে প্রস্তুত হয়েছিল। তাই সরকার তাড়াতাড়ি জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে বেআইনী বলে ঘোষণা করে দিলেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও খিলাফৎ দল প্রতিবাদ জানালো। ফলে বহু কংগ্রেস নেতা, দেশবন্ধু স্বয়ং, তার পুত্র, স্ত্রী, মৌলনা আবুল কালাম আজাদ ও সুভাষচন্দ্র গ্রেপ্তার হলেন। এবং তাদের বিভিন্ন পর্যায়ে কারাদণ্ড হল। শোনা যায় দেশবন্ধু গ্রেপ্তার হবার সময় বলেছিলেন, আমায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাতে কি হয়েছে? সমস্ত দেশ আজ কারারুদ্ধ! তার মুক্তি সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

 তাই হল বাস্তব ক্ষেত্রে। যেদিন প্রিন্স অব ওয়েলস এসে পৌছলেন কোলকাতায় সেদিন সহর শুদ্ধ হরতাল। পথ ঘাট লোকশূন্য। পতাকা উড়ছে

১৩