পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কাবুলে এসে রাশিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হন কারণ রাশিয়ার দূতাবাসে তাঁর পরিচিত কেউ ছিল না। তারপর তিনি ইতালীর দূতাবাসে যান। সেখানে ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী সিনর কারোনি এবং জার্মান ব্যবসায়ী টমাস তাঁর রোমে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দেন।

 উত্তমচাঁদের বাড়ীতে থাকবার সময় সুভাষবাবু একান্ত সাবধানতার সঙ্গে থাকতেন। যখনই তাঁরা ঘরে বসে কথা কইতেন তখন ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখা হত। উত্তমচাঁদ বেরোবার সময় তাঁর ঘরে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে যেতেন। এমন কি বেতারে বাংলা গান পর্যন্ত তিনি শুনতেন না পাছে অন্য লোকে সন্দেহ করে। কিন্তু তবু উত্তমচাঁদের এক ভাড়াটে একদিন তাঁকে দেখতে পায় এবং তিনি যে কে তা আর বুঝতে বাকী থাকে না। ব্যাপার দেখে সেই ভদ্রলোক এমনই ভয় পেয়ে যান যে তিনি নিজেই বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। ব্যাপারটা পাছে ছড়িয়ে পড়ে তাই উত্তমচাঁদ সুভাষবাবুকে দিনকতকের জন্য এক সরাইখানায় পাঠিয়ে দেন। এই সময়ের মধ্যেই ইটালীয় রাজদূত কারোনির স্ত্রী এসে খবর দেন যে রোম থেকে চিঠি এসেছে। চিঠিতে ছাড়পত্র পাবার কথা কিছু ছিল না।

 এদিকে সরাইখানাতে সুভাষবাবু আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। তাঁর সেবাশুশ্রূষার জন্যে উত্তমচাঁদ তাঁকে নিজের বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে এলেন। এই সময় সুভাষবাবুর প্রায়ই কাশি হত এবং সেই কাশি পাছে অন্য কেউ শুনতে পায় তার জন্যে কাশির সঙ্গে সঙ্গেই উত্তমচাঁদের স্ত্রী জোরে জোরে আওয়াজ করে কাশির আওয়াজ চাপা দেবার চেষ্টা করতেন।

 দেখতে দেখতে তিন সপ্তাহ কেটে গেল কিন্তু ছাড়পত্রের ব্যবস্থা হল না। কারোনি বললেন বোধ হয় মস্কোর ইতালীয় দূতাবাসে এই নিয়ে কিছু গণ্ডগোল হযে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে হয়েছিলও তাই। তখন সুভাষবাবু স্থানীয় জার্মান বা রাশিয়ানদের সাহায্যে রাশিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে আবার যোগসাধনের চেষ্টা

১৬১