পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করাতে লাগলেন কিন্তু মনোমত ফল পেলেন না। এর মধ্যেই কারোনি এসে জানালেন যে চিঠি এসেছে। এই চিঠিতে জানানো হয়েছে যে আভ্যন্তরিক গণ্ডগোল কোন রকমে মিটেছে এবং সুভাষবাবুর জন্যে রোম থেকে বার্তাবাহক আসছেন।

 ক্রমাগত বাড়ীতে থেকে সুভাষবাবু হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। তবে বাইরে বেরোতে গেলে কাবুলি বেশ ধারণ করাই ভাল। উত্তমচাঁদ তাঁকে যে পোষাক দিলেন তা তাঁর গায়ে বেশ হল, কিন্তু জুতোটা একটু কড়া হল। অগত্যা সুভাষবাবু জুতো কিনতে কাবুলির বেশে রাস্তায় বেরোলেন। দোকানে জুতো কিনতে গেলেন দোকানী তাঁকে দেখেই ভারতীয় বলে আন্দাজ করেছিলেন। সুভাষবাবু নিজে হাবিবিয়া কলেজের অধ্যাপক জিয়াউদ্দীন বলে পরিচয় দিয়ে বসলেন। দোকানী বললেন হাবিবিয়া কলেজের সব অধ্যাপককেই তিনি চেনেন কিন্তু তাঁকে চিনতে পারছেন না। অগত্যা সুভাষবাবু বলতে বাধ্য হলেন যে তিনি নতুন এসেছেন ঐ কলেজে এবং কোনমতে কাজ শেষ কবে তাড়াতাড়ি আছে বলে সরে পড়লেন।

 সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মধ্যে উত্তমচাঁদ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি রাশিয়ায় যাবার জন্যে এত ব্যস্ত কেন! সুভাষচন্দ্র বলেন যে বর্তমান অবস্থায় রাশিয়াই একমাত্র ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্য করতে পারে। যদিও রাশিয়া ও জার্মানের মধ্যে আপাত প্রীতি সম্বন্ধ যে কোন দিন ভেঙ্গে যেতে পারে তবু অন্তরে অন্তরে রাশিয়ার সঙ্গে ইংরাজের মিল হতে পারে না। ইংরাজ দু’শ বছরের শাসনে ভারতকে যেরকম দুর্বল করে দিয়েছে তাতে সেখানে সশস্ত্র বিপ্লব শুরু করা শক্ত। কিন্তু রক্তক্ষয়কারী বিপ্লব এবং বিদেশী শক্তির সাহায্য ব্যতীত ভারতের মুক্তি সম্ভব নয়। অথচ ভারতবর্ষে জেলের মধ্যে পচে পচে এ দুটোর কোনটাই করা সম্ভব নয়। একমাত্র পথ দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে কোন শত্রুর দেশে গিয়ে হাজির হয়ে প্রচারকার্য চালানো। সেই দিক থেকে রাশিয়াই

১৬২