পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তিনি প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক জীবনের দীক্ষা নিয়েছিলেন। বহুদিন একসঙ্গে থেকেছেন এমন কি জেলের মধ্যেও আটমাস তারা একত্র ছিলেন এবং শেষ অক্ষরে অক্ষরে তিনি তার আদেশ পালন করে এসেছেন। যদিও, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে লিখিত এক পত্রে তিনি লিখেছিলেন, অনেকে মনে করে সে, আমবা অন্ধের মত তাকে অনুসরণ করতুম। কিন্তু তার প্রধান চেলাদের সঙ্গে ছিল তার সব চেয়ে ঝগড়া। নিজের কথা বলতে পারি যে, অসংখ্য বিষয ত'র সঙ্গে ঝগড়া হত। কিন্তু আমি জানতুম যে, যত ঝগড়া করি না কেন—আমার ভক্তি ও নিষ্ঠা অটুট থাকবে—আর তাঁর ভালবাসা থেকে আমি কখনও বঞ্চিত হব না। তিনিও বিশ্বাস করতেন যে, যত বড় ঝঞ্চা আসুক না কেন—তিনি আমাকে পাবেন তাঁর পদতলে। আমাদের সকল ঝগড়ার মিটমাট হত মার (বাসন্তী দেবীর) মধ্যস্থতায়। কিন্তু হায় “রাগ করিবার অভিমান করিবার জায়গাও আমাদের ঘুচে গেছে।’

 “আমি বোধ হয় খুব বেশীদিন এখানে থাকবো না। কিন্তু খালাস হবার তেমন আর আকা এখন আর নাই। বাহিরে গেলেই যে শ্মশানের শূন্যতা আমাকে ঘিরে বসবে—তার কল্পনা করলেই হদয়টা সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। এখানে সুখে দুঃখে স্মৃতি ও স্বপ্নের মধ্যে দিনগুলি একরকম কেটে যাচ্ছে। পিঞ্জরের গরদের গায়ে আঘাত করে যে জাল। বোধ হয়—সে জ্বালার মধ্যেও যে কোনও এ পাওয়া যায় না—তা আমি বলিতে পারি না। যাকে ভালবাসি—যাকে অন্তরের সহিত ভালবাসার ফলে আমি আজ এখানে তাকে বাস্তবিক ভালবাসি এই অনুভূতিটা সেই আলার মধ্যেই পাওয়া যায়। তাই বোধ হয়, বদ্ধ দুষারের গরাদের গায়ে আছাড় খেয়ে হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হলেও—তার মধ্যে একটা সুখ একটা শান্তি-একটা তৃপ্তি পাওয়া যায়। বাহিরের হতাশা বাহিরের শূন্যতা এবং বাহিরের দায়িত্ব,—এখন আর মন যেন চায় না।”

 দেশবন্ধুর অবর্তমানে বাঙ্গলা দেশে যে দলাদলি সুরু হয়ে গিয়েছিল জেলে

২২