পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

থাকতে সুভাষবাবু সে খবর পেয়েছিলেন। এর জন্যে তাঁর মন অশান্তিতে ভরে উঠেছিল। তিনি একবার লিখেছিলেন, ‘বাঙ্গালী আজ অন্ধ, কলহ বিষাদে নিমগ্ন, তাই এই কথা বুঝিয়াও বুঝিতেছে না। নিঃস্বার্থ আত্মদানের কথা আর ত’ কোথাও শুনিতে পাই না। অত বড় একটা প্রাণ নিজেকে নিঃশেষে বিলাইয়া মহাশূন্যে মিলিয়া গেল; আগুণের ঝলকার মত ত্যাগ মূর্তি পরিগ্রহ করিয়া বাঙ্গালীর সম্মুখে আত্মপ্রকাশ করিল; সেই দিব্য আলোকের প্রভাবে বাঙ্গালী ক্ষণিকের জন্য স্বর্গের পরিচয় পাইল; কিন্তু আলোকও নিভিল, বাঙ্গালীও পুরাতন স্বাথের গণ্ডীতে আশ্রয় লইল। আজ বাঙ্গলার সবত্র কেবল ক্ষমতার জন্য কাড়াকাড়ি চলিতেছে। যার ক্ষমতা আছে—সে ক্ষমতা বজায় রাখিতেই ব্যস্ত। যার ক্ষমত। নাই সে ক্ষমত। কাড়িবার জন্য বদ্ধপরিকর। উভয় পক্ষই বলিতেছে, ‘দেশোদ্ধাব যদি হয়, তবে আমার দ্বারাই হউক, নয় তো হইয়া কাজ নাই। এই ক্ষমতালোলুপ রাজনীতিকবৃন্দের ঝগড়া বিবাদ ছাড়িয়া, নীরবে আত্মোৎসর্গ করিযা যাইতে পারে, এমন কর্মী আজ কি বাঙ্গলায় আর নাই?’

 তবে, এই মানসিক দুশ্চিন্তার সুফল যে কিছু ছিল না, তা নয়। এর ফলেই তিনি দেশের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বিশেষ করে চিন্তা করতে আরম্ভ করেন। এবং তিনি কিষাণ-মজুর-ও-ছাত্র আন্দোলনের পরিকল্পনা করতে শুরু করেন।

 ইতিপূর্বেই তার স্বাস্থ্য ভাঙ্গতে শুরু হয়েছিল। ১৯২৭ সালের এপ্রিল মাস বরাবর তিনি একেবারে প্রায উত্থান-শক্তি-রহিত হয়ে পড়লেন। তিনি ব্রঙ্কোনিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন এবং এবং তার চলিশ পাউণ্ড ওজন হ্রাস পেয়েছিল। এই সময়ে তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর দেখে সরকার থেকে তাঁকে রেঙ্গুণে স্থানান্তরিত করা হল এবং তার দাদা ডাঃ সুনীল বস্তু ও লেফটন্যাণ্ট কর্ণেল কেলসাল সাহেবকে পাঠানো হল তাকে ভালভাবে পরীক্ষা করবার জন্যে। তাঁরা দুজনেই মত দিলেন যে তাঁকে সুইটজারলণ্ডে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো দরকার। তাঁদের যুক্ত সুপারিশ অনুয়ায়ী সরকার পক্ষ বললেন যে তিনি নিজের

২৩