পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাহাড়ের বুক কেটে প্রপাতের পর প্রপাত ডিঙ্গিয়ে, রাত্রির মত ঘন বন পেরিয়ে আবার ধূ-ধূ—করা রিক্তক্ষেত্র পার হয়ে সে ছুটে চলবে আপনার প্রাণশক্তির জোয়ারে।

 মানুষের জীবন ত নয় যেন এক একটা প্রবাহমান নদী। শুধু বাহ্যিক বা দৈহিক বেঁচে থাকার মধ্যে নয়, অন্তরে অন্তরে যে প্রাণশক্তি বন্যার মত বয়ে চলে, যে শক্তি আগিয়ে নিয়ে চলে দেহের যন্ত্রটাকে ঘটনার পর ঘটনার স্তুপ ঠেলে — সেই প্রাণশক্তির ধারা নদীর মতই উত্থান আর পতনের আবর্তে চিহ্নিত। এই ত জীবন! এই জীবনের মাঝেই কত ঢেউ—কত ওঠা আর পড়া—এবং এই ওঠা-পড়ার সমষ্টিগত একটা বেগে মানুষ এগিয়ে চলে—এগিয়ে চলে জীবন-নদী। সে নদী কোন কোন ক্ষেত্রে চলার পথেই হারায় আপন সত্বা আবার কোন কোন ক্ষেত্রে নিজস্ব প্রাণশক্তির বলেই লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছয়।

 যাঁরা মহামানব তাঁদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের তুলনা এই দিক থেকে অতি সহজেই করা যেতে পাবে। কেবল এঁদের ক্ষেত্রে বৃহত্তর পরিবেশ আর বিশালতর বিস্তারের প্রশ্ন মাত্র—ধারা সেই এক।

 সুভাষচন্দ্রের জীবন এই শেষ পর্যায়ের নদী যার লক্ষ্যের মোহনায় ছুটে যাবার একটা প্রচণ্ড শক্তি আছে, যে শক্তি ভারতের মুক্তি সংগ্রামের উজ্জ্বল ইতিহাসের কূলে কূলে উচ্ছ্বসিত হয়ে বয়ে চলেছে—কখনও সঙ্গীতের মত মধুর সে প্রবাহের সুর, কখনও বা বন্যার গর্জনের মত প্রচণ্ড! এ নদীর পথে শুধু যে পাহাড় আর জঙ্গল আছে তা নয়, আছে অনেকগুলো প্রপাত। প্রথম প্রপাত মান্দালয়ের নির্বাসন আমরা দেখেছি, দ্বিতীয় প্রপাত ইউরোপের প্রবাস! প্রপাত অর্থাৎ দ্বিগুণতর প্রচণ্ডতা!

 * * * *

 ১৯৩৩ সালের গোড়ার দিকে সুভাষবাবু ইউরোপ যাত্রা করলেন। যাত্রার আগে কর্তৃপক্ষ আদেশ দিলেন যে তিনি জার্মানীতে প্রবেশ করতে পারবেন

৩৪