পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভারতে এই বইয়ের প্রচার আইনতঃ নিষিদ্ধ করে দিলেন। ইংলণ্ড সুভাষবাবুকে যে চোখেই দেখুক অন্যান্য ইউরোপীয় রাজ্য তাঁকে যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছিল। বিশেষ করে বল্কান রাজ্যগুলিতে তিনি সব চেয়ে বেশী উৎসাহ পেয়েছিলেন। বাঙ্গলা দেশের মত এই বল্কান রাজ্যগুলিতে অনেকবার সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন হয়ে গিয়েছে। বোধ হয় সেইজন্যই বীর সৈনিক সুভাষচন্দ্রের মন এই দেশগুলির দিকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়েছিল। বেলগ্রেডে থাকতে সুভাষবাবুকে কেন্দ্র করে একটা মজার ঘটনা ঘটে। বেলগ্রেডের মুখপত্র ‘পলিটিক’ তাঁকে ভারতের অবস্থা সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ লিখতে অনুরোধ করে। তারা বলে যে কিছুদিন আগে রামপুরের নবাব ভারতে বৃটিশ শাসনের প্রশংসা করে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তার প্রত্যুত্তরে জাতীয়তাবাদী কোন লেখকের মন্তব্য তারা প্রকাশ করতে চায়। সুভাষবাবু এই প্রবন্ধ লিখেছিলেন কিন্তু বৃটিশের মধ্যস্থতায় এই প্রবন্ধ ছাপাতে দেওয়া হয় নি। উপরন্তু রয়টার দেশবিদেশে খবর পাঠিয়ে দিলে যে বেলগ্রেডে সুভাষবাবু কিছুই সম্বর্ধনা পান নি ইত্যাদি। পরে অবশ্য সমস্ত ঘটনা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে সুভাষবাবু এক প্রবন্ধ লেখেন

 এমনি করেই ভারতে বৃটিশ শাসনের বর্বরতার বিরুদ্ধে ভারতীয় কণ্ঠে প্রতিবাদের স্তর প্রথম সুভাষবাবুর প্রচারকার্যের মধ্যেই ধ্বনিত হয়ে ওঠে। পরবর্তী যুগে অবশ্য জওহরলাল এবং আরও পরে অতি আধুনিক যুগে বিজয়লক্ষ্মী যথেষ্ট এ বিষয়ে সচেষ্ট হয়ে উঠেছেন কিন্তু সুভাষবাবুই যে এ পথের পথপ্রদর্শক সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তাঁর রাজনৈতিক মতামত নিয়ে যতই মতানৈক্য থাকুক না কেন এই দিক দিয়ে তাঁর অবিস্মরণীয় দান সকলেই একবাক্যে স্বীকার করে নেবে। এবং এ বিষয়ে তাঁকে সকল বিষয়েই যিনি সাহায্য করেছিলেন সেই বিঠলভাই প্যাটেলকে সকলে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। ছাত্রাবস্থা থেকেই সুভাষবাবুর মনে যে আত্মমর্যাদা ও দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়ে উঠেছিল ইউরোপে এসে তার আরও বিরাটতর রূপে আত্মপ্রকাশ দেখা গেল।

৩৭