পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জগতের রাজনৈতিক ইতিহাসের অধ্যায়ে সুভাষবাবুর নাম চিরকালের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে গেল।

 শুধু রাজনৈতিক আত্মমর্যাদার প্রশ্ন নয়, বিদেশে বৃটিশজাতি ভারতবর্ষের সামাজিক ও নৈতিক জীবন নিয়ে যে সমস্ত মিথ্যা রটনা শুরু করেছিল—বিশেষ করে বৃটিশের স্বেচ্ছাকৃত দারিদ্র্য ও সর্বাঙ্গীন অভাব অনটনের সুযোগ নিয়ে যে সমস্ত পুস্তক ও সিনেমার ছবি প্রকাশিত ও প্রচারিত হত সুভাষবাবু সে সবের বিরুদ্ধে ভীষণভাবে আন্দোলন শুরু করে দেন। তাঁর চেষ্টাতেই ভারতে ইংরাজ শাসনের মিথ্যা গৌরবময় ঘটনার ছবি ‘বাঙ্গালী’ প্রদর্শন বন্ধ হয়। সুভাষবাবু জানিয়েছিলেন দেশকে যে ইউরোপে এমন ছবিও দেখানো হয়েছে যেখানে দেখা গেছে মহাত্মাজী হাঁটুর ওপর কাপড় পরে একটি ইউরোপীয় মহিলার হাত ধরে নৃত্য করছেন। চিত্র প্রদর্শনীতে ভারতবর্ষ সম্বন্ধে যে সব ছবি দেখানো হয়েছে সেখানে স্থান পেয়েছে কুৎসিৎ কদাকার বুভুক্ষাপীড়িত কঙ্কালের ছবি, কোথাও বা সহমরণের বিবরণ, কোথাও বা বাল্যবিবাহের নগ্নতম রটনা ইত্যাদি। এই সব ছবি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য এই যে ইংরাজ আমাদের এই সব অনাচারের হাত থেকে রক্ষা করেছে, সভ্য করেছে, মানুষ করেছে — সেই দিক থেকে তারা আমাদের ধন্যবাদার্হ!

 ইউরোপে তখন ফ্যাসিজম অব কমিউনিজমের জের চলেছে। প্রত্যেক রাজ্যেই এই দুই দল গড়ে উঠেছে, কম আর বেশী। সুভাষবাবুরও এদের সঙ্গে মিশে মিশে এই দুই দলের দ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আশ্চর্য এই যে বাস্তবিকপক্ষে তিনি পুরোপুরিভাবে কোন বিশেষ দলের দ্বারা প্রভাবান্বিত হন নি। উপরন্তু তিনি এই দুই মতবাদের সারাংশ— ভাল অংশগুলোর সামঞ্জস্য করে একটা নিজস্ব ও উদার মতবাদ সৃষ্টি করেছিলেন। এই মতবাদের নাম সমবাদীয় মতবাদ। এই মতবাদকে কেন্দ্র করে তিনি যে দল গঠন করার পরিকল্পনা করেছিলেন সেই দলের নাম সমবাদীয় সঙ্ঘ। লণ্ডনে আহুত নিখিলভারত সর্বদলীয় অধিবেশনে আমন্ত্রিত হয়ে সেখানেই প্রথম তাঁর এই নব পরিকল্পিত

৩৮