পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অধিবেশন মণ্ডপে ৫১টি তোরণ তৈরী হল, মণ্ডপের উন্নত-শীর্ষে উড়তে লাগলো ৫১টি জাতীয় পতাকা, ৫১টি জাতীয় সঙ্গীতে মুখর হয়ে উঠলো আকাশ বাতাস, আর ৫১টি বলদবাহিত রথে এলেন ভারতের মুকুটহীন সম্রাট দেশগৌরব সুভাষচন্দ্র বসু। আর এই বিরাট শোভাযাত্রার সম্মুখে রইলেন সুভাষচন্দ্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দী স্যার বল্লভভাই প্যাটেল। সব জড়িয়ে সে এক অপূর্ব পরিবেশ! বিশেষ করে সভাপতির শোভাযাত্রা নাকি এতই অপূর্ব হয়েছিল যে অনেকের মতে কংগ্রেসের ইতিহাসে এত বড় শোভাযাত্রা সে-পর্যন্ত হয় নি।

 বিঠল নগরের চারদিকে নেতাদের কুটির। বিশেষ করে সুভাষচন্দ্র ও জওহরলালজীর কুঞ্জের চারপাশে দর্শনব্যাকুল তরুণ সম্প্রদায়ের ভীড়। তাছাড়া প্রত্যেক ঘরে ঘরে নেতাদের, বিভিন্ন প্রদেশের প্রতিনিধিদের, মন্ত্রিদের এবং দর্শক ও সাংবাদিকদের, ঘরোয়া বৈঠক বসে গেছে। নানারকম আলোচনা চলছে। এবারে কংগ্রেস অধিবেশন সত্যিই নানা দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমতঃ বামপন্থী নেতা সুভাষচন্দ্র এবার সর্ববাদি সম্মত সভাপতি। তার ওপর ইউরোপের যুদ্ধ যেরকম দ্রুত ঘনিয়ে আসছে তার প্রভাব সম্বন্ধেও একটা কিছু সঠিক ধারণা হওয়া প্রযোজন। সর্বোপরি রাজবন্দীদের মুক্তি প্রশ্ন নিয়ে বিহার এবং যুক্তপ্রদেশের শ্রীকৃষ্ণ সিংহ ও গোবিন্দ বল্লভ পন্থের মন্ত্রীমণ্ডলী যে পদত্যাগ করেছেন সেটাও একটা বড় বিবেচ্য বিষয়। বামপন্থীদল চেষ্টা করছে যাতে উক্ত দুই নেতাদের মত অন্যান্য প্রদেশের প্রধান মন্ত্রীরাও অনুরূপ পন্থা অবলম্বন করেন এবং সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ তোলেন।

 সুভাষচন্দ্র ১৩ই ফেব্রুয়ারী এসে পৌঁছেছিলেন। ১৪ই তারিখে ওয়ার্কিং কমিটি বা কার্যকরী সমিতির অধিবেশন বসলো। ১৬ তারিখে বিদায়ী সভাপতি জওহরলাল নেহরু সুভাষবাবুর হস্তে কংগ্রেসের সভাপতিত্বের গুরুদায়িত্ব তুলে দিলেন। সেদিন কি কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পেরেছিল যে এক বছর পরেই এই

৪৯