পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সর্বাপেক্ষা অনুশোচনার বিষয় এই যে যখন তাঁরা এই পত্র পাঠালেন তখন সুভাষ বাবু ১০৩ ডিগ্রি জ্বরে শয্যাগত। শুধু শয্যাগত বললে ভুল হবে তিনি রোগের প্রকোপে প্রায় জ্ঞানশূন্য! অথচ যাঁরা এই পত্র পাঠালেন তাঁরা মুক্তিসংগ্রামের এক একটি মহারথ, যারা বহু নির্যাতন ও যন্ত্রণা ভোগের সময় সমস্ত নেতাদের সঙ্গে পাশাপাশি দাঁড়িয়েছেন, ভাগ করে সমস্ত লাঞ্ছনা ভোগ করেছেন, অপরের দুঃখে অন্যের হৃদয় সমবেদনায় আপ্লুত হয়ে উঠেছে····। তাঁদের কাছ থেকে এই অবস্থায় এমন ব্যবহার দেশ কি আশা করতে পেরেছিল?

 সুভাষবাবু বীরের মত স্থির ভাবে এই পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করলেন। তিনি জানতেন এই পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করার দায়িত্ব কতখানি। এর ফলে কংগ্রেস পার্লামেণ্টারী বোর্ড ভেঙ্গে যাবে, ওয়ার্কিং কমিটিও ভেঙ্গে যাবে, এমন কি সম্পাদক পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন। অর্থাৎ সমস্ত কার্যভার তাঁকে এই অসুস্থ শরীর নিয়েই বহন করতে হবে। কিন্তু তবু তিনি এতটুকুও বিচলিত হলেন না। পদত্যাগপত্র স্বীকার করে নিয়ে সমস্ত বিরুদ্ধ সম্ভাবনার বিরুদ্ধে নিজের সমস্ত নিষ্ঠার ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেন।


 এদিকে ত্রিপুরী অধিবেশনের দিন ঘনিয়ে আসছে। ডাঃ নীলরতন সরকার সুভাষবাবুকে পরীক্ষা করে এই মর্মে এক বুলেটিন দিলেন যে বর্তমানে তাঁর শরীরের অবস্থা বিবেচনা করে অধিবেশন এক পক্ষ কাল স্থগিত রাখা হোক না হলে বিশেষ সঙ্কট উপস্থিত হতে পারে।

 এই বুলেটিনের পর হয় অধিবেশন স্থগিত রাখতে হয় আর না হয় ত সুভাষবাবুর পক্ষে পদত্যাগ পত্র দাখিল করা ছাড়া আর উপায় নেই। সকলেই আশা করেছিল হয় ত অধিবেশন স্থগিত রাখা হবে কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হল না। এবং যদিও গান্ধী ভাবাপন্ন বহু কংগ্রেস কর্মী চারিদিক থেকে দাবী জানাতে লাগলেন যে যদি সুভাষ বাবু দক্ষিণ পন্থী নেতাদের বিরুদ্ধে তাঁর মতামত প্রত্যাহার

৬০