পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাজ করেই সন্তুষ্ট বোধ করলে চলবে না। এই সব কাজ-কর্মের যে উদ্দেশ্য এবং আদর্শ অর্থাৎ আত্মবিকাশ সাধন সে কথা ভুললে চলবে না। কাজটাই চরম উদ্দেশ্য নয়, কাজের ভিতর দিয়ে চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে হবে এবং জীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করতে হবে মানুষকে অবশ্য নিজের ব্যক্তিত্ব ও প্রবৃত্তি অনুসারে একদিকে বৈশিষ্ট্য লাভ করতে হবে, কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যের মূলে (Specialisation) একটা সর্বাঙ্গীন বিকাশ চাই। যে ব্যক্তির সর্বাঙ্গীন উন্নতি হয় নাই সে অন্তরে কখনও সুখী হতে পারে না; তার মনের মধ্যে সর্বদা একটা শূন্যতা বা অভাববোধ শেষ পর্যন্ত রয়ে যায়। এই সবার্ঙ্গীন বিকাশের জন্য চাই — (১) ব্যায়াম চর্চা (২) নিয়মিত পাঠ (৩) দৈনিক চিন্তা বা ধ্যান।

 এই দিক থেকে রামকৃষ্ণ পরমহংস এবং তদীয় শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ সুভাষচন্দ্রের গুরু। সুভাষচন্দ্রের জীবন স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ জীবন পরিকল্পনার চূড়ান্ত প্রতিফলন মাত্র। সুভাযচন্দ্র নিজে বলেছিলেন, রামকৃষ্ণ পরমহংস ও স্বামী বিবেকানন্দ একই শক্তির দুটি অখণ্ড প্রকাশ মাত্র। আমার জীবনকালে স্বামীজী যদি জীবিত থাকতেন তাহলে আমি আগে গিয়ে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করতাম।

 তাছাড়া যখনই কোন উপদেশ প্রার্থী তাঁর নিকট চরিত্রগঠনের উপায় সম্বন্ধে জানতে চেয়েছেন তখনই তিনি বলেছেন বিবেকানন্দের রচনাবলী দৈনিক পাঠ করতে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত। বিবেকানন্দের রচনাবলীর মধ্যে তিনি ‘বিবেকবাণী, ‘পত্রাবলী’ ও ‘বক্তৃতাবলীর’ ওপরই বিশেষ জোর দিতেন। দেশবন্ধু—তাঁর জীবনের রাজনৈতিক গুরুর মহাপ্রয়াণের পর দেশের মধ্যে যখন তীব্র দলাদলি চলেছে তখন তিনি মান্দালয় জেল থেকে আক্ষেপ করে লিখেছিলেন—আমি ত’ জানিতাম সেবার আদর্শ এই— ‘দাও দাও ফিরে নাহি চাও, থাকে যদি হৃদয়ে সম্বল’। যে বাঙ্গালী এত শীঘ্র দেশবন্ধুর ত্যাগের কথা ভুলিয়াছে—সে যে কতদিনের আগেকার স্বামী বিবেকানন্দের ‘বীরবাণী’ ভুলিবে— ইহা আর বিচিত্র কি?

৭০