পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিন্তু এ সবার পশ্চাতে আর একটি আদর্শ পুরুষ ধ্রুবতারকার মত স্থির ঔজ্জ্বল্য নিয়ে আপাত প্রচ্ছন্ন থেকে তাকে পথ দেখাতে লাগলেন। তিনি শুধু পুরুষ নন, তিনি পুরুষসিংহ বিবেকানন্দ। এই একটি মানুষ যিনি ধর্ম ও দেশপ্রেমকে এক অপূর্ব মিশ্রনের মধ্য দিয়ে এক বৃহত্তর পরিণতির দিকে জাগ্রত করে তুলেছিলেন। এই লোকটিকে প্রথম থেকেই অন্তরের সঙ্গে শ্রদ্ধা করতে শিখেছিলেন সুভাষচন্দ্র! প্রথমে তার প্রভাব প্রচ্ছন্ন হয়ে কাজ করতো, তারপর তিনি যখন ম্যাটিক পাশ করে ১৯১৩ সালে কোলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজে এসে ভতি হলেন তখন থেকেই তিনি ভালভাবে বিবেকানন্দকে এবং রামকৃষ্ণপরমহংসকে জানতে সুরু করলেন। ফলে, তার মনের মধ্যে অদ্ভুত রকমের এক পরিবর্তন এল। মুক্তির পিপাসা জাগলো। এই বস্তুতান্ত্রিক জড়-জীবন থেকে এক মহত্তর সত্যের আস্বাদ পাবার জন্য তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠল। এবং শেষে ১৯১৪ সালে শীতের সময় তিনি সমস্ত সম্পদ, সমস্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে হিমালয়ের উদ্দেশ্যে বেরিষে পড়লেন বাড়ী ছেড়ে। কত ঋষি, সাধক হিমালয়ের দুর্গমে তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন, সত্য উপলব্ধি করেছেন, তাই তিনিও সঙ্কল্প করলেন হিমালয়ের নির্জনতাব মধ্যে সাধনা করতে হবে। তাছাড়া সেখান থেকেই কোন সাধককে বেছে নিয়ে গুরু করতে হবে। গুরু না হলে ত’ সাধনা সম্ভব নয়।

 এমনি করেই ভারতের ইতিহাসে আর এক বালক বৃদ্ধ সমস্ত ঐশ্বর্যকে হেলায় ত্যাগ করে সেই একমাত্র সত্যকে অর্জন করবার জন্যে যাত্রা করলেন। সুভাষচন্দ্রের বয়স তখন মোল বছর মাত্র।

 ভারতের আধুনিক রাজনৈতিক জগতের কোন জননায়কের জীবনে এমনটি দেখা যায়? এত অল্প বয়সে এতবড় আকাক্ষার ক্ষুধা - এতবড় সাধনার দুর্দমনীয় বল?

 কিন্তু, ব্যর্থ হতে হল। অনেক ঘুরলেন তিনি। পাহাড়ে-পবতে বনে-জঙ্গলে, রাত্রির পর রাত্রি একা একা ঘুরলেন শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যে, দিনের পর দিন