শঙ্কর, রামানুজ প্রভৃতি দার্শনিকগণের মত সুভাষচন্দ্রের নিকট হইতেও জীবনের ব্যাখ্যায় কোন নূতন তত্ত্ব লাভ করিতে পারিত।
সুভাষচন্দ্রের রহস্যজনক অন্তর্দ্ধানে তাঁহার অপূর্ব্ব উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। মোগল-যুগে আওরঙ্গজেবের রাজধানী দিল্লী হইতে মহারাষ্ট্র-সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছত্রপতি শিবাজীর পলায়নের মত সুভাষচন্দ্রের পলায়নও অভিনব কৌশলের পরিচায়ক।
সর্ব্বোপরি সুভাষচন্দ্রের স্বদেশপ্রেম অতুলনীয়। তাঁহার অতি বড় শত্রুকেও স্বীকার করিতে হইবে যে, তাঁহার স্বদেশপ্রেম জীবনে-মরণে, শয়নে-স্বপনে অবিরাম-গতিতে জলপ্রপাতের বারিরাশির মত উদ্দামবেগে ছুটিয়া চলিত— কোনরূপ বাধাবিঘ্ন মানিত না। দেশের পরাধীনতায় তাঁহার অন্তরলোকে যে বেদনার সুর ঝঙ্কৃত হইত, তাহাই তাঁহাকে অগ্নি-দগ্ধ খধূপের মত সুদূরের পথে লইয়া গিয়াছিল!
ফিলিপাইনের স্বাধীনতা-শহীদ জোস্ রিজলের মর্ম্মরমূর্ত্তিতে সুভাষচন্দ্রের মাল্যদানের যে মর্ম্মস্পর্শী বিবরণ সাংবাদিক হাসিওয়ারার বিবৃতি হইতে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ উদ্ধৃত করিয়াছেন, নিম্নে প্রদত্ত সেই বিবরণ পাঠ করিলে স্পষ্টই হৃদয়ঙ্গম হইবে, পরাধীনতার মর্ম্মজ্বালা তাঁহার প্রাণে ছিল কত গভীর—আর যাঁহারা পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচন করিতে যাইয়া স্বাধীনতার বেদীমূলে আত্মবিসর্জ্জন দিয়াছেন, তাঁহাদের প্রতিও, সুভাষচন্দ্রের হৃদয়ের অন্তস্তলে যে কি বিপুল পরিমাণে শ্রদ্ধা সঞ্চিত ছিল! স্বদেশপ্রেমের সাধক সুভাষচন্দ্রের ইহা এক সবাক্ উজ্জ্বল চিত্র!
“১৯৪৩ সালের নভেম্বর মাস। চমৎকার একটি দিন—ম্যানিলার সমুদ্রোপকূলে লুনেটা পার্কে সুভাষচন্দ্র গেলেন