বর্ত্তমান সময় পর্য্যন্ত নেপালে ভারতবর্ষ হইতে নানাবিধ সম্প্রদায়ের লোক আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে। সেই সঙ্গে অনেক ধর্ম্মমত, অনেক প্রকার আচার ব্যবহার এই দেশে প্রচারিত হইয়াছে। শুধু প্রচারিত হওয়া নয়, সর্ব্বধর্ম্মের এবং সর্ব্বজাতির এক অপূর্ব্ব সংমিশ্রণ ঘটিয়াছে। বৌদ্ধ নেওয়ারগণের সহিত নেপালের আশ্রিত হিন্দুগণ বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হইয়া পড়েন এবং সেই সঙ্গে বৌদ্ধগণ অজ্ঞাতসারে হিন্দুভাবাপন্ন হইয়া পড়িয়াছেন। নেওয়ারদিগের ভিতর দুইটি সম্প্রদায় আছে,—বৌদ্ধমার্গী এবং শিবমার্গী। শিবমার্গিগণ প্রকৃত পক্ষে হিন্দু। গুর্খাগণের আগমনের পূর্ব্বেই নেপালে এই উভয় সম্প্রদায় ছিল। নেওয়ার রাজাগণ সকলেই প্রায় হিন্দু ছিলেন। তাঁহারা বৌদ্ধ প্রজাদিগের ধর্ম্মে কখন হস্তক্ষেপ করেন নাই, বরং অনেক সাহায্য; তথাপি হিন্দু প্রজাগণই যে অধিকতর অনুগ্রহ এবং সহায়তা লাভ করিতেন, তাহাতে সংশয় নাই। বর্ত্তমান গুর্খারাজগণ বৌদ্ধপ্রজাদিগের ধর্ম্মে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করেন না বটে, কিন্তু তাঁহারা তাহাদের ধর্ম্ম অতি অবজ্ঞার চক্ষে দর্শন করেন; সুতরাং কি পুরাকালে কি বর্ত্তমান সময়ে নেপালের বৌদ্ধগণ কখনই বিশেষভাবে রাজপ্রসাদ লাভে সমর্থ হয় নাই। কেবল এই কারণেই নয়, নেপালের বৌদ্ধগণের দোষেই ঐ ধর্ম্ম এখন তথায় অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত হইয়াছে। যেরূপ লক্ষণ দেখা যাইতেছে তাহাতে বৌদ্ধধর্ম্ম তথায় শীঘ্রই লুপ্তধর্ম্ম হইবে।
পাতা:নেপালে বঙ্গনারী - হেমলতা দেবী.pdf/৬১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নেপালে বৌদ্ধধর্ম্ম।
৩৭