পাতা:নৈবেদ্য - জলধর সেন.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৈবেদ্য দিকে না চাহিয়াই তাহ অন্তঃপুরে গৃহিণীর নিকট পঠাইয়া দিলেন। আমি নিঃশ্বাস ফেলিয়া বাসায় ফিরিয়া আসিলাম ! এইবার ঋণের ভাবনা আমাকে গ্ৰাস করিয়া বসিল । কি করিয়া কিস্তিবন্দি মাফিক মাসিক পািনর টাকার সুন্দ যথানিয়মে বড় বাবুকে দিব ? মাসে উপাৰ্জন পনর টাকা, “একষ্টা” কাজে কোন মাসে দুই চারি টাকা হয়। দীর্ঘকাল আবার কখনও তাও হয় না। স্বামী স্ত্রীতে অনাহারে থাকিয়া ঋণ শোধ করা সম্ভবপর নহে। সুলোচনাকে শ্বশুরালয়ে পাঠাইয়া যে ব্যয়-সংক্ষেপ করিব, সে সম্ভাবনাও নাই ; শ্বশুর মহাশয়ের অবস্থা এদিকে অত্যন্ত শোচনীয় হইয়া উঠিয়াছে। অনাহারে মৃত্যুই যদি অনিবাৰ্য্য হয়, কলিকাতায় একত্ৰ থাকিয়া দুজনে মরিব । সুলোচনা আমার সঙ্গে থাকিয়া দুঃখ ভোগ করিবার জন্য প্ৰস্তুত হইলেন, বলিলেন, “আমার নির্ববুদ্ধিতার জন্যই তোমার এত জ্বালা, আর এ দুর্দিনে তোমাকে বিপদে ফেলিয়া কোন মুখে বাপের বাড়ী গিয়া বসিয়া থাকিব ? দুঃখ সহিতে পারিব না। ত হিন্দুর মেয়ে হইয়া জন্মিয়াছিলাম কেন ?” মুহূৰ্ত্তের জন্য মনে হইল জগতের মধ্যে আমি সৰ্ব্বাপেক্ষা দুঃখী নহি, আমার সহিত অবস্থা পরিবর্তন করিতে চায়, খুজিলে পৃথিবীতে এমন লোকও মেলে। প্ৰিয়তমা পত্নীর সেই স্বৰ্গীয় প্রণয়কে হৃদয়ের অক্ষয় কবচস্বরূপ গ্ৰহণ করিয়া, ভগবানের করুণায় নির্ভর করিয়া, আমার ত্ৰিশ বৎসরের যৌবনের সকল শক্তি, সকল দক্ষতা, সকল চিন্তা, ঋণ-শোধরূপ কঠোর ব্ৰত সাধনার অঙ্গ বিবেচনা করিয়া, অতি দুষ্কর কৰ্ম্ম সাধনে রত হইলাম। যাহা করিলাম তাহার অধিক কেহ পারে, একথা আমি বিশ্বাস করি না। ;-সকলে যে ততখানি পারে না, একথা নিশ্চিত। 8