পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 গাড়িতে হেমনলিনীর সেই স্নিগ্ধগম্ভীর মুখ, তাহার বিশেষ ধরনের সেই শাড়ি পরা, তাহার চুল বাঁধিবার পরিচিত ভঙ্গি, তাহার হাতের সেই প্লেন বালা এবং তারাকাটা দুইগাছি করিয়া সোনার চুড়ি দেখিবামাত্র রমেশের বুকের মধ্যে একটা ঢেউ যেন একেবারে কণ্ঠ পর্যন্ত উচ্ছ্বসিত হইল।

 অন্নদাবাবু কহিলেন, “এই-যে রমেশ, ভাগ্যে পথে দেখা হইল! আজকাল চিঠি লেখাই বন্ধ করিয়াছ, যদি-বা লেখ, তবু ঠিকানা দাও না। এখন যাইতেছ কোথায়? বিশেষ কোনো কাজ আছে?”

 রমেশ কহিল, “না, আদালত হইতে ফিরিতেছি।”

 অন্নদাবাবু। তবে চলো, আমাদের ওখানে চা খাইবে চলো।

 রমেশের হৃদয় ভরিয়া উঠিয়াছিল— সেখানে আর দ্বিধা করিবার স্থান ছিল না। সে গাড়িতে চড়িয়া বসিল। একান্ত চেষ্টায় সংকোচ কাটাইয়া হেমনলিনীকে জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি ভালো আছেন?”

 হেমনলিনী কুশলপ্রশ্নের উত্তর না দিয়াই কহিল, “আপনি পাস হইয়া আমাদের যে একবার খবর দিলেন না বড়ো?”

 রমেশ এই প্রশ্নের কোনো জবাব খুঁজিয়া না পাইয়া কহিল, “আপনিও পাস হইয়াছেন দেখিলাম।”

 হেমনলিনী হাসিয়া কহিল, “তবু ভালো, আমাদের খবর রাখেন!”

 অন্নদাবাবু কহিলেন, “তুমি এখন বাসা কোথায় করিয়াছ?”

 রমেশ কহিল, “দরজিপাড়ায়।”

 অন্নদাবাবু কহিলেন, “কেন, কলুটোলায় তোমার সাবেক বাসা তো মন্দ ছিল না।”

 উত্তরের অপেক্ষায় হেমনলিনী বিশেষ কৌতূহলের সহিত রমেশের

২৭