পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পৃথিবীর কথা বড়ো বেশি ভাবেন না, তবু চেষ্টা করিলে হয়তো এটুকুও বুঝিতে পারিবেন যে, ভদ্রলোকের কন্যার সহিত আপনি যেরূপ ব্যবহার করিতেছেন এরূপ করিয়া আপনি বাহিরের লোকের জবাবদিহি হইতে নিজেকে বাঁচাইতে পারেন না— এবং যাঁহাদিগকে আপনি শ্রদ্ধা করেন তাঁহাদিগকে লোকসমাজে অশ্রদ্ধাভাজন করিবার ইহাই উপায়।

 রমেশ। আপনার উপদেশ আমি কৃতজ্ঞতার সহিত গ্রহণ করিলাম। আমার যাহা কর্তব্য তাহা আমি শীঘ্রই স্থির করিব এবং পালন করিব এ বিষয়ে আপনি নিশ্চিন্ত হইবেন— এ-সম্বন্ধে আর অধিক আলোচনা করিবার প্রয়োজন নাই।

 অক্ষয়। আমাকে বাঁচাইলেন রমেশবাবু। এত দীর্ঘকাল পরে, আপনি যে কর্তব্য স্থির করিবেন এবং পালন করিবেন বলিতেছেন ইহাতেই আমি নিশ্চিন্ত হইলাম— আপনার সঙ্গে আলোচনা করিবার শখ আমার নাই। আপনার সংগীতচর্চায় বাধা দিয়া অপরাধী হইয়াছি— মাপ করিবেন। আপনি পুনর্বার শুরু করুন, আমি বিদায় হইলাম।

 এই বলিয়া অক্ষয় দ্রুতবেগে বাহির হইয়া গেল।

 ইহার পরে অত্যন্ত বেসুরো সংগীতচর্চাও আর চলে না। রমেশ মাথার নীচে দুই হাত রাখিয়া বিছানার উপরে চিত হইয়া শুইয়া পড়িল। অনেক ক্ষণ এইভাবে গেল। হঠাৎ ঘড়িতে টংটং করিয়া পাঁচটা বাজিল শুনিয়াই সে দ্রুত উঠিয়া পড়িল। কী কর্তব্য স্থির করিল তাহা অন্তর্যামীই জানেন— কিন্তু আশু প্রতিবেশীর ঘরে গিয়া যে পেয়ালা-দুয়েক চা খাওয়া কর্তব্য সে-সম্বন্ধে তাহার মনে দ্বিধামাত্র রহিল না।

 হেমনলিনী চকিত হইয়া কহিল, “রমেশবাবু, আপনার কি অসুখ করিয়াছে।”

 রমেশ কহিল, “বিশেষ কিছু না।”

৪৪