পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বসিয়াছে। মুখের উপরে একটি পরিপূর্ণ প্রসন্নতার শান্তি। একটি সর্বাঙ্গীন সার্থকতা তাহাকে যেন বেষ্টন করিয়া রহিয়াছে।

 চায়ের সময়ের পূর্বেই কবিতার বই এবং হার্মােনিয়ম ফেলিয়া রমেশ অন্নদাবাবুর বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইল। অন্য দিন হেমনলিনীর সহিত দেখা হইতে বড়ো বিল হইত না। কিন্তু আজ চায়ের ঘরে গেল সে ঘর শূন্য, দোতলা বসিবার ঘরে দেখিল সে ঘরও শূন্য, হেমনলিনী এখনাে তার শয়নগৃহ ছাড়িয়া নামে নাই।

 অন্নদাবাবু যথা সময়ে আসিয়া টেবিল অধিকার করিয়া বসিলেন। রমেশ ক্ষণে ক্ষণে চকিতভাবে দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করিতে লাগিল।

 পদশব্দ হইল, কিন্তু ঘরে প্রবেশ করিল অক্ষয়। যথেষ্ট দক্ষতা দেখাইয়া কহিল, “এই যে রমেশবাবু, আমি আপনার বাসাতেই গিয়াছিলাম।”

 শুনিয়াই রমেশের মুখে উদ্‌বেগের ছায়া পড়িল।

 অক্ষয় হাসিয়া কহিল, “ভয় কিসের রমেশবাবু। আপনাকে আক্রমণ করিতে যাই নাই। শুভসংবাদে অভিনন্দন প্রকাশ করা বন্ধুবান্ধবের কর্তব্য— তাহাই পালন করিতে গিয়াছিলাম।”

 এ কথায় অন্নদাবাবুর মনে পড়িল, হেমনলিনী উপস্থিত নাই। হেমনলিনীকে ডাক দিলেন— উত্তর না পাইয়া তিনি নিজে উপরে গিয়া কহিলেন, “হেম, এ কী, এখনো সেলাই লইয়া বসিয়া আছ? চা তৈরী যে। রমেশ অক্ষয় আসিয়াছে।”

 হেমনলিনী মুখ ঈষৎ লাল করিয়া কহিল, “বাবা, আমার চা উপরে পাঠাইয়া দাও— আজ আমি সেলাইটা শেষ করিতে চাই।”

 অন্নদা। ওই তােমার দোষ হেম। যখন যেটা লইয়া পড় তখন

৫১