অক্ষয়। রোশনচৌকির বায়না দিতে চলিয়াছেন বুঝি। এ দিকে সময়সংক্ষেপ। আমি আপনার শুভকর্মে বাধা দিব না, চলিলাম।
অক্ষয় চলিয়া গেলে রমেশ অন্নদাবাবুর বাসায় গিয়া উপস্থিত হইল। ঘরে ঢুকিতেই হেমনলিনীর সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইল। আজ রমেশ সকাল-সকাল আসিবে, ইহা হেমনলিনী নিশ্চয় ঠিক করিয়া প্রস্তুত হইয়া বসিয়া ছিল। তাহার সেলাইয়ের ব্যাপারটি ভাঁজ করিয়া রুমালে বাঁধিয়া টেবিলের উপরে রাখিয়া দিয়াছিল। পাশে হার্মোনিয়ম-যন্ত্রটি ছিল। আজ খানিকটা সংগীত-আলোচনা হইতে পারিবে এইরূপ তাহার আশা ছিল। তাছাড়া অব্যক্ত সংগীত তো আছেই।
রমেশ ঘরে ঢুকিতেই হেমনলিনীর মুখে একটি উজ্জ্বল-কোমল আভা পড়িল। কিন্তু সে আভা মুহূর্তেই ম্লান হইয়া গেল যখন রমেশ আর কোনো কথা না বলিয়া প্রথমেই জিজ্ঞাসা কহিল, “অন্নদাবাবু কোথায়।”
হেমনলিনী উত্তর করিল, “বাবা তাঁহার বসিবার ঘরে আছেন। কেন। তাঁহাকে কি এখনি প্রয়োজন আছে। তিনি তো সেই চা খাইবার সময় নামিয়া আসিবেন।”
রমেশ। না, আমার বিশেষ প্রয়োজন আছে। আর বিলম্ব করা উচিত হইবে না।
হেমনলিনী। তবে যান, তিনি ঘরেই আছেন।
রমেশ চলিয়া গেল। প্রয়োজন আছে! সংসারে প্রয়োজনেরই কেবল সবুর সয় না। আর ভালোবাসাকেই দ্বারের বাহিরে অবকাশ-প্রতীক্ষা করিয়া বসিয়া থাকিতে হয়।
শরতের এই অম্লান দিন যেন নিশ্বাস ফেলিয়া আপন আনন্দভাণ্ডারের সোনার সিংহদ্বারটি বন্ধ করিয়া দিল। হেমনলিনী হার্মোনিয়মের নিকট হইতে চৌকি সরাইয়া লইয়া টেবিলের কাছে